ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মাকে ৫ টুকরা করা ছেলেসহ ৭ জনের ফাঁসি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৩
মাকে ৫ টুকরা করা ছেলেসহ ৭ জনের ফাঁসি

নোয়াখালী: নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নে ২০২০ সালে নুরজাহান বেগম (৫৭) নামে এক নারীকে পাঁচ টুকরো করে হত্যার ঘটনায় ছেলেসহ সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

 

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নিলুফার সুলতানা এ রায় দেন।

ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির (৩২) এবং তার সহযোগী নিরব (২৬), নুর ইসলাম (৩২), কালাম (৩০), সুমন (৩৩), হামিদ (২৮) ও ইসমাইল (৩০)।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট গুলজার আহমেদ জুয়েল জানান, এ হত্যার ঘটনায় প্রথমে নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে পুলিশি তদন্তে হত্যার সঙ্গে সরাসরি হুমায়ুনেরই জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। একই সঙ্গে ছয় সহযোগী মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলেও প্রমাণ পায় পুলিশ।  

তিনি আরও জানান, রায় ঘোষণার সময় আদালতে সাত আসামি উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় ২৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর মধ্যে নিহতের ছেলের বন্ধু নিরব ও কসাই নুর ইসলামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাপাতি, বালিশ, কোদাল ও নিহতের ব্যবহৃত কাপড় উদ্ধার করা হয়।  

প্রসঙ্গত, নিহত নুরজাহানের ছেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। নিহত নারীর দুই সংসারের দুই ছেলে রয়েছেন। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মাকে জিম্মায় রেখে কয়েকজনের কাছ থেকে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সুদের ভিত্তিতে। তবে ঋণ রেখে দেড় বছর আগে বেলাল মারা যান। এরপর ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তার পরের সংসারের ভাই হুমায়ুনকে পাওনাদাররা চাপ দিকে থাকেন। হুমায়ুন তার মাকে বিষয়টি জানালে তার মা ১৩ শতাংশ জমি বিক্রি করে এ ঋণ পরিশোধ করতে বলেন।  

হুমায়ুন জবাবে মাকে জানান, তার মালিকানাধীন ১৪ শতাংশ ও বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতাংশ জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করা হোক। এতে তার মা রাজি ছিলেন না। অন্যদিকে ভাই দুলালের কাছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিল নুরজাহানের। পাওনা টাকা পরিশোধ করার জন্য তিনি তার ভাইকে প্রায়ই চাপ দিতেন। এ কারণে হুমায়ুনের মামাতো ভাই কালাম ও মামাতো বোনের জামাই সুমনও তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এছাড়া তার প্রতিবেশী ইসমাইল ও আব্দুল হামিদেরও বেলালের জমির প্রতি লোভ ছিল। এজন্য তারাও হুমায়ুনকে প্রত্যক্ষ হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন।

হুমায়ুন জবানবন্দিতে জানান, বেলালের স্ত্রীর জমি থেকে দুই শতাংশ আব্দুল হামিদকে ও বাকি আট শতাংশ ইসমাইলকে দেওয়ার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়। তারপর মায়ের জমি সমান পাঁচ ভাগ করে হুমায়ুন, নোমান, সুমন, কালাম ও কসাই নুর ইসলামকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- এ প্রতিশ্রুতিতে তারা গত ৬ অক্টোবর বাড়ির পাশে একটি ব্রিজের ওপর বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। পরে তারা রাতের কোনো এক সময় ঘরের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে নুরজাহানকে হত্যা করে মরদেহ পাঁচ খণ্ড করে পাওনাদারদের ধানক্ষেতে তা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।