ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন আইনজীবীরা। এ অবস্থায় জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারি থেকে আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছেন আইনজীবীরা।
আদালতের একটি সূত্র জানায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল ১ আদালত থেকে গত ০১ জানুয়ারি থেকে ০৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২১ জন আসামি জামিনে মুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু পাঁচজন।
তবে ৭ ফ্রেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ দফায় বাড়ানো কর্মসূচির শেষ দিনেও তাদের অপসারণ না করায় আবারো সব আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন আইনজীবীরা। আগামী ১৬ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদালত বর্জনের ঘোষণা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর ভূঁইয়া জানান, নিজের মামলা পার্টি ইচ্ছা করলে নিজে মুভ করতে পারেন। কিন্তু বেইলবন্ড ছাড়া হাকিম রিলিজের অর্ডার দিতে পারেন না। বেইলবন্ড ছাড়া হাকিম কীভাবে রিলিজ অর্ডার দেয়। এটা আইন সম্মত নয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য না শুনে বিচারক জামিন দিতে পারেন না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পেশকার এবং পিয়নরা আইনজীবীদের পাশ কাটিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব জামিন করিয়ে দিচ্ছেন। নাজিরকে নিয়ে আমাদের আন্দোলনের মূল দাবি তাকে বদলি করা হয়েছে তাতে আইনজীবীরা খুশি। তবে দুই বিচারকের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, আইনজীবীদের পক্ষ থেকে জামিন চাওয়া হলে তখন বেইলবন্ড দাখিলের শর্তপূরণ করতে হয়। যখন পক্ষ নিজেই আসে তখন তার পক্ষে এসব শর্ত প্রযোজ্য নয়। সাদা কাগজের ওপর সরকারি স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি লাগিয়ে জমা দিলে বিচারকের স্বাক্ষরের মাধ্যমে জামিন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এখানে লেনদেনের কোনো প্রশ্নই আসে না।
এদিকে আইনজীবীদের আদালত বর্জনের মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আলোচিত নাজির মো. মোমিনুল ইসলামকে চাঁদপুর জেলা জজ আদালতে বদলি করা হয়েছে। আর চাঁদপুর আদালতের নাজির মো. ছানাউল্যা তালুকদারকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বদলি করা হয়েছে। প্রশাসনিক কারণ উল্লেখ করে বুধবার তাদের বদলি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে আইনজীবীরা আদালত বর্জন অব্যাহত রাখায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচার প্রার্থীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন।
এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারিরা। এ অবস্থায় জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারি থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। পরবর্তীতে দফায় দফায় ৭ কর্মদিবস আদালত বর্জনের কর্মসূচি পালন করেন আইনজীবীরা।
এছাড়াও বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও অশালীন স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ আইনজীবীকে দু’দফায় তলব করেছে উচ্চ আদালত। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীদের সঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বৈঠকের পর দুটি আদালত বাদে বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৩
আরএ