ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

চুড়িহাট্টায় আগুন, চার বছর পর শুরু হয়েছে বিচার

খাদেমুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
চুড়িহাট্টায় আগুন, চার বছর পর শুরু হয়েছে বিচার ফাইল ফটো

ঢাকা: পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের প্রাণহানির ঘটনায় হওয়া মামলার প্রায় চার বছর পর বিচার শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে দ্রুতই সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করে এই মামলার বিচারকাজ তারা শেষ করতে পারবেন।

অপরদিকে আসামিপক্ষ মনে করছে প্রকৃত আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও তাদেরই আসামি করা হয়েছে।  

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন নিহত হন। দগ্ধ ও আহত হন অনেকে। এই ঘটনায় আসিফ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা চকবাজার মডেল থানায় ওই দুই আসামি ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে সোহেল ওরফে শহীদ ও হাসানসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, আসামিরা তাদের চার তলাবাড়ির বিভিন্ন ফ্লোরে ফ্যামিলি ভাড়া না দিয়ে আগুন লাগিয়ে মানুষের জীবন এবং জানমাল ধ্বংস হতে পারে জেনেও অবৈধ দাহ্য পদার্থ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের কাছে  গোডেউন হিসেবে ভাড়া দেন।

ঘটনার প্রায় তিন বছর পর ভবনের মালিকসহ আট জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাইউম। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার ৮ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দা হাফসা ঝুমা। আগামী ১৪ মার্চ এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- ভবনের মালিক দুই সহোদর হাসান ওরফে হাসান সুলতান, সোহেল ওরফে শহীদ ওরফে হোসেন, রাসায়নিকের গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল হক, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতির, মো. নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিফ। আসামিরা সবাই জামিনে আছেন।

এই মামলার বিচারকাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মাজহারুল হক বলেন, মামলাটির চার্জগঠন হয়ে গেছে। বাদী আসিফকে সাক্ষ্য দিতে সমন পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ করে বিচারকাজ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আশা করছি খুব দ্রুতই এই মামলার বিচারকাজ শেষ হবে।  

এই মামলার বাদী আসিফ কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সারা বছর আমাদের খবর কেউ নেয় না। আমরা কেমন আছি, কীভাবে আমার পরিবার চলছে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। বাবা হারিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার অনুদান পাইনি। সিটি কর্পোরেশন থেকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও সেটা দেওয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত ৬৬ পরিবারের মধ্যে কিছু সংখ্যক চাকরি পেলেও বাকিদের খোঁজ-খবর নেয়নি। আর যাদের চাকরি দিয়েছে সেটা হচ্ছে মাস্টার রোলে। অনেক চেষ্টা করেও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।

বিচার বিষয়ে তিনি বলেন, এতোগুলো মানুষ যাদের কারণে মারা গেল তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।  

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মনে করেন এ ঘটনায় যারা প্রকৃত দায়ী তাদের আসামি করা হয়নি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকেই আবার আসামি করা হয়েছে।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক দুই সহোদর ভাইয়ের আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনা করছেন আইনজীবী মোস্তফা পাঠান ফারুক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের আসামিরা ভবনের মালিক। আমাদের ভবন পুড়ে ভস্মিভূত হয়েছে। এমনকি তাদের মা আগুনের তাপে আহত হয়ে পরে মারা গেছেন। আমরা যাদের ভাড়া দিয়েছি সিটি কর্পোরেশন তাদের পারফিউম তৈরির জন্য লাইসেন্স দিয়েছে। ব্যবসার বিষয়ে তদারক করার দায়িত্ব ছিল তাদের। যারা লাইসেন্স দিয়েছে তাদের তদারক করা দরকার ছিল। কিন্তু তারা সেটি করেনি। অথচ এই মামলায় সিটি কর্পোরেশনের কাউকে আসামি করা হয়নি। আমাদের ভবন পুড়েছে, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। অথচ আমাদেরকেই আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারাসহ অন্যান্য যেসব ধারায় এই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনোটিই এই দুজন আসামির বিরুদ্ধে নাই। আমরা ডিসচার্জের আবেদনে সব বিষয় উপস্থাপনের পরও পুলিশ প্রতিবেদন অনুযায়ী চার্জ করা হয়েছে। এখন চার্জের আদেশের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার চিন্তা করছি।

অবশ্য রাসায়নিকের গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদের আইনজীবীও তাদের দায় অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমার আসামিরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। পাশের বিল্ডিংয়ে এদের পাওয়ার হাউজ। যথাযথভাবে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছিলেন। এটি একটি দুর্ঘটনা। যাদের অসতর্কতায় এ অগ্নিকাণ্ড তাদের পরিবর্তে আমাদের এ ঘটনায় আসামি করা হয়েছে। আশা করছি বিচার শেষে সেটি প্রমাণিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
কেআই/এসআইএস  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।