ঢাকা: ‘প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, মো. শাহরিয়ার আলম নিজের রোপণ করা আমগাছের বেড়ে ওঠার প্রতিবন্ধকতা দূর করতেই তালগাছগুলোতে ক্ষত সৃষ্টি করে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মারার অপচেষ্টা করেছেন। ’
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় সরকারি সড়কের পাশে লাগানো অর্ধশত তালগাছ মারতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলমের অভিনব কায়দায় কীটনাশক প্রয়োগের ঘটনার বিষয়ে হাইকোর্টে এমন প্রতিবেদন দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম।
ওসির প্রতিবেদন দেখে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের বেঞ্চ আগামী ৪ এপ্রিল পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন। ওই দিন ওসিকে ফের প্রতিবেদন দিতে বলেন। পাশপাশি ওসি আমিনুল ইসলাম ও অভিযুক্ত শাহরিয়ার আলমকেও আদালতে থাকতে বলা হয়েছে।
আদালতে শাহরিয়ার আলমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. জাহিদুল হক জাহিদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী।
ওই ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করা সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট পত্রিকার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার।
এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সম্পাদকীয় নজরে নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ শাহরিয়ার আলমকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
ওই আদেশ অনুসারে বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শাহরিয়ার আলম গত ১২ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হন।
এরপর দুপুর পৌনে ১২টা থেকে (মধ্যাহ্ন বিরতি ছাড়া) বিকেল চারটা পর্যন্ত আদালতের অভিপ্রায় অনুযায়ী তিনি দাঁড়িয়েছিলেন।
পরে শুনানি শেষে আদালত ওই ঘটনায় করা একটি জিডি বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে ওসিকে ব্যাখ্যা দিতে এবং জাতীয় দৈনিকটির প্রতিনিধিকে তথ্য উপাত্ত নিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি হাজির থাকতে বলেন। আদেশ অনুসারে সংশ্লিষ্টরা হাজির হন।
পুলিশের প্রতিবেদনের একাংশে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় যে, মো. শাহরিয়ার নিজের রোপণ করা আমগাছের বেড়ে ওঠার প্রতিবন্ধকতা দূর করতেই তালগাছগুলোতে ক্ষত সৃষ্টি করে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মারার অপচেষ্টা করেছেন। তালগাছ রক্ষার্থে তার কোনো উদ্যোগ ও আন্তরিকতা পরিলক্ষিত ছিল না। তালগাছগুলোর ক্ষতি করার পেছনে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে শাহরিয়ারের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।
গত ৩১ জানুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোয় ‘৫০ তালগাছে কীটনাশক; দোষীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ কেন নয়’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়মিত মৃত্যুর ঘটনা সত্যিই আমাদের মনোযোগের বাইরে থাকে। যেমন পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু, বজ্রপাতে মৃত্যু। প্রতিবছর এসব কারণে এত বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। এ নিয়ে সরকার বা নীতিনির্ধারকদেরও বলিষ্ঠ কিছু করতে দেখা যায় না।
নানা সময় প্রকল্প নেওয়া হলেও সেগুলোর কোনো সুফল মেলেনি, পুরোপুরি ব্যর্থই বলা যায়। বজ্রপাত নিরোধে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করেছেন, কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনাকাটা ও বসানোও হয়েছে। লাখ লাখ তালবীজ সংগ্রহ ও রোপণের কথাও বলা হয়েছে।
কিন্তু দিন শেষে জনগণের অর্থ অপচয় ছাড়া কিছুই হয়নি। সেখানে সাধারণ মানুষেরাই স্বেচ্ছায় বছরের পর বছর ধরে তালবীজ রোপণ করে বরং বড় ভূমিকা রাখছেন। এখন সেসব তালগাছের ওপরও আসছে আঘাত। সম্প্রতি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাইগাছা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রায় এক দশক আগে স্থানীয় এক বৃদ্ধসহ কয়েকজন ব্যক্তি সড়কের উভয় পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তালবীজ লাগিয়েছিলেন। সেসব তালগাছ বড় হয়ে এখন ছায়া দিচ্ছে। একটি তালবীজ গাছ হয়ে উঠতেই সময় লাগে এক দশক বা যুগের বেশি।
ফলে বোঝা যায়, কী নিষ্ঠা ও ধৈর্য নিয়ে পরিচর্যা করে তালগাছগুলো বড় করে তুলেছেন বাইগাছার সেসব উদ্যোগী মানুষ। আর আমরা অবাক হলাম, সেই গাছগুলো মারতে বাকল তুলে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন শাহরিয়ার আলম নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। প্রকৃতি ও গাছের প্রতি কী রকম নির্দয় হলে এমন কাজ করা যায়, সেটিই প্রকাশ পায় এ ঘটনায়।
শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শাহরিয়ার আলম তালগাছ মেরে ফেলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য প্রথম আলোর প্রতিবেদককে অনুরোধও করেন। তালগাছের ছায়ার কারণে শাহরিয়ারের লাগানো আমগাছ ঠিকমতো বেড়ে উঠছিল না। ফলে এমন কাণ্ড করেছেন তিনি।
এমন অমানবিক কাজের জন্য শাহরিয়ার আলমকে আইনের আওতায় আনা হোক। এছাড়া বন বিভাগের স্থানীয় দায়িত্বশীলদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, মরতে বসা তালগাছগুলোকে সারিয়ে তোলার দ্রুত পদক্ষেপ নিন।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
ইএস/এমজেএফ/