ঢাকা: উচ্চ আদালতের আদেশের নির্ধারিত সময়ে না দিয়ে ১৪ বছর পর নম্বরপত্রের সনদ দেওয়ায় করা ক্ষতিপূরণের মামলায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত ছাত্র জিল হোসেনকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
আর রায়ের দিন থেকে ওই অর্থের বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের জিল হোসেন মারা যান। তাই এ অর্থ পাবেন জিল হোসেনের উত্তরাধিকারীরা।
মঙ্গলবার বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন।
ক্ষতিপূরণ দিতে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের করা আপিল খারিজ করে এই রায় দেওয়া হয়।
জানা যায়, ১৯৭১-১৯৭২ শিক্ষাবর্ষে জিল হোসেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি (অ্যাগ্রি) স্নাতক দ্বিতীয় পর্বের চতুর্থ বর্ষের পুরোনো পাঠ্যক্রমের চূড়ান্ত পরীক্ষার্থী ছিলেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফলে জিল হোসেনকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে। এ ফলাফল পুনর্বিবেচনা চেয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আবেদন করে তিনি। কিন্তু বিফল হয়ে ১৯৭৫ সালে তিনি আবার পরীক্ষায় অংশ নেন। তখন তাকে বহিষ্কার করা হয়। এসবের প্রতিকার চেয়ে ১৯৭৫ সালের ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহের প্রথম মুনসেফ আদালতে তিনি মামলা করেন।
মামলায় তিনি দাবি করেছিলেন, তার প্রাপ্ত নম্বরের (১৯৭৩ সালে দেওয়া পরীক্ষায়) সঙ্গে ভগ্নাংশ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নম্বরের সঙ্গে ভগ্নাংশ যোগ না করে তাকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে। এ মামলায় আদালত ১৯৭৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ভগ্নাংশ নম্বর যোগ না করে তাকে অকৃতকার্য করাকেও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে জজ আদালতে আপিল করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালের ৩১ জানুয়ারি এই আদালতের দেওয়া রায়ে জিল হোসেনকে বহিষ্কার আদেশ বেআইনি ঘোষণা করা হয়। একই বছর হাইকোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
হাইকোর্ট ১৯৭৬ সালের ২৪ আগস্ট মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য প্রথম মুনসেফ আদালতে পাঠান। শুনানি শেষে ১৯৭৮ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রথম মুনসেফ আদালত ভগ্নাংশ নম্বর যোগ করে ৩০ দিনের মধ্যে জিল হোসেনের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার নির্দেশ দেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার জেলা জজ আদালতে আপিল করে। যেটি নামঞ্জুর হয়।
পরে হাইকোর্টে আপিল করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ওই আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ১৯৮৩ সালের ১৬ জানুয়ারি বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন।
হাইকোর্টের রায়ের পর ১৯৮৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জিল হোসেনের একটি আবেদন গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে তাকে পাস নম্বর দিয়ে ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর নম্বরপত্রের সনদ দেয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তখন জিল হোসেনের বয়স ৪৭ বছর। এ সনদ দিয়ে বয়সের কারণে তিনি আর সরকারি চাকরি পাবেন না।
এরপর ২০০০ সালের ১৮ অক্টোবর ক্ষতিপূরণ চেয়ে নিম্ন আদালতে মামলা করেন জিল হোসেন।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টের রায় ১৪ বছর ৯ মাস পরে কার্যকর করায় তার জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে বলে দাবি করা হয়। এ ক্ষতিপূরণ মামলায় ২০০৮ সালের ২৬ আগস্ট রায় দেন ময়মনসিংহের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে ২ কোটি টাকা জিল হোসেনকে দিতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চূড়ান্ত শুনানির পর মঙ্গলবার আপি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
আদালতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানিয়া আমীর ও মিয়া মো. ইশতিয়াক। প্রয়াত জিল হোসেনের পক্ষে ছিলেন লিগ্যাল এইডের আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২৩
ইএস