ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

তিন মাস শিশুদের নিয়ে জাপান যেতে পারবেন না এরিকো

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৩
তিন মাস শিশুদের নিয়ে জাপান যেতে পারবেন না এরিকো

ঢাকা: জাপান থেকে আসা দুই শিশুর জিম্মা নিয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাবা ইমরান শরীফের আপিল তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ঢাকার জজ আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) প্রধান বিচারপতির হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

একই সঙ্গে দুই পক্ষকে এ সময়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়েছে।

অর্থাৎ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিশুরা যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আদালতে শিশুদের জাপানি মা নাকোনো এরিকোর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। বাবার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আইনজীবী আখতার ইমাম, আইনজীবী রাশনা ইমাম।

এরিকোর আইনজীবী শিশির মনিরের তথ্যমতে, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকোনো ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওয় বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিনজন সন্তান জন্ম নেয়। তারা হলো- জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।

২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোকে ডিভোর্স দিতে আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব নাকচ করে। পরে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।

ওই ঘটনার চারদিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।

এদিকে, একই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। পরে ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে ফেরেন।

তিনি ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন উচ্চ আদালত। কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট একই সালের ২১ নভেম্বর দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সাথে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকোনো এরিকো। পরে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি হবে পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। তাই আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।

শুনানি শেষে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান শিশুদের জিম্মা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে রায় দেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে পরদিন ইমরান শরিফ আপিল করেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি আদালত আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। পরে ২ মার্চ ঢাকার জেলা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া  আপিল শুনানির জন্য আগামী ২৪ মে দিন ধার্য রেখেছেন।

পরে আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগের অনুমতি ছাড়া দুই সন্তানকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারির এই আদেশের বিরুদ্ধে একটি রিভিউ আবেদন করেছিলেন জাপানি মা। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন ইমরান শরীফ। কারণ, এরিকো সন্তানদের দেশের বাইরে নিয়ে যেতে দুবার চেষ্টা করেছিলেন।

এর মধ্যে আদালত অবমাননার আবেদন করেছিলেন এরিকো নিজেও। কারণ, ইমরান এক সন্তানকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। এ আবেদনের শুনানি শেষে আপিল বিভাগ জেলা জজ আদালতে থাকা শিশুদের জিম্মা নিয়ে আপিল তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া আরেকটি নির্দেশনা দিয়েছেন স্ট্যাস্টাকো (স্থিতাবস্থা) মেনে চলার। যার অর্থ, এখন যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থাটা মেনে চলতে হবে যতদিন পর্যন্ত জেলা জজ আদালতে থাকা আপিল নিষ্পত্তি না হয়। এর অর্থ দুই শিশুকে দেশের বাইরেও নেওয়া যাবে না। তারা যে যার কাছে আছে, সেখানেই থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৩
ইএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।