ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সোনার দুলের লোভে শিশু হত্যা, নারীর আমৃত্যু কারাদণ্ড  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
সোনার দুলের লোভে শিশু হত্যা, নারীর আমৃত্যু কারাদণ্ড  

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় কানের দুলের লোভে পপি সাহা (৭) নামে একটি শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে রুনা আক্তার আঁখি (২৫) নামে এক নারীকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

একই মামলার আসামি রুনার স্বামী এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রায়ে আদালত রুনাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।  

আসামিদের উপস্থিতিতে সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।  

এদিকে রুনাকে আগে অন্য একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। দুটি হত্যা মামলার রায়ে তাকে কারাভোগ করতে হচ্ছে।  

দণ্ডপ্রাপ্ত রুনা জেলার রায়পুর উপজেলার পূর্ব কেরোয়া গ্রামের এমরানের স্ত্রী। ভিকটিম পপি উপজেলার বামনী ইউনিয়নের সাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।  

মামলার এজাহার এবং আদালত সূত্রে জানা গেছে, রুনা এবং তার স্বামী এমরান ২০২১ সালের জুলাই মাসের দিকে রায়পুর উপজেলার সাগরদি গ্রামের ফারুক হওলাদার বাড়ির কাশেম হাওলাদারের একটি ঘর ভাড়া নেন। ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটার মধ্যে রুনা পাশের নেপাল সাহার বাড়ির নির্মল সাহার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে পপিকে তার ভাড়া বাসায় ডেকে নেন। এসময় শিশুটির কানে থাকা তিন আনা সোনার দুল নিতে শিশুটিকে গলাটিপে হত্যা করেন রুনা। পরে তার মৃতদেহ খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন তিনি। ঘটনার পর রুনার স্বামী এমরান হোসেন ঘরে এলে তাকে সব খুলে বলেন রুনা। পরে দুজন মিলে মৃতদেহ গুম করার পরিকল্পনা করেন।  

অন্যদিকে দীর্ঘ সময় শিশুটিকে না পেয়ে বাড়ির লোকজন এবং স্বজনরা খুঁজতে শুরু করেন। একপর্যায়ে রুনার ঘরে পপির মৃতদেহ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং রুনা ও তার স্বামী এমরানকে আটক করে। রুনা হত্যার ঘটনাটি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। কানের দুল ছিনিয়ে নিতে তিনি শিশুটিকে হত্যা করেন বলে জানান। ওই দিন শিশুটির মা ববিতা রানী সাহা (৩২) রায়পুর থানায় রুনা এবং তার স্বামী এমরানকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।  

রায়পুর থানার সেই সময়ের উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দেন। এতে রুনাকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত এবং তার স্বামীকে হত্যার তথ্য গোপনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।  

জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জসিম উদ্দিন বলেন, আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামি রুনাকে দোষী সাবস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন। তবে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তার স্বামী এমরানকে খালাস দেওয়া হয়।  

রায়ের পর মামলার বাদী ববিতা রানী সাহা বলেন, আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আমার মেয়েকে রুনা গলাটিপে হত্যা করেছে, তার ফাঁসির রায় হলে আরও খুশি হতাম।  

এদিকে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর রায়পুর পৌরসভার দেনায়েতপুর গ্রামের রোজিনা আক্তার (১৫) নামে এক মাদরাসা ছাত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে দোষী সাবস্ত হন রুনা আক্তার আঁখি। ২০২২ সালের ১৮ মে একই আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম হত্যা মামলার রুনাসহ চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। মামলার প্রধান আসামি আমির হোসেন কিশোরী রোজিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করায় এ হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। হত্যার পর রুনা ওই ছাত্রীর সঙ্গে থাকা স্বর্ণলঙ্কার নিয়ে যান। স্বর্ণের লোভে তিনি দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ডটিও ঘটান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।