ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বগুড়ার সেই বিচারককে সরিয়ে নিল মন্ত্রণালয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
বগুড়ার সেই বিচারককে সরিয়ে নিল মন্ত্রণালয় বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বিক্ষোভ করে।

ঢাকা: বগুড়ায় অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্য করার অভিযোগের মুখে থাকা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

বদলি সংক্রান্ত সরকারের এক প্রস্তাবে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) একমত পোষণ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

এর আগে ২২ মার্চ ওই বিচারককে বদলি করতে আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্টে একটি স্মারক পাঠায়।

ওই বিচারকের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের বিদ্যালয়ে ডেকে এনে পা ধরে মাফ চাওয়াতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিকেলে ওই বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

এ ঘটনায় বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আকতার খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তারা সমাধান দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। জানা যায়, বিদ্যালয়ে ঝাড়ু দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।

বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে উচ্চপদস্থ ওই কর্মকর্তার মেয়ের সঙ্গে তার সহপাঠীদের পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেওয়া নিয়ে ঝামেলা বাঁধে।

বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে বগুড়া জজ আদালতের এক বিচারকের মেয়ে পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। গত সোমবার (২০ মার্চ) ওই বিচারকের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল। তবে নিজেকে বিচারক তথা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মেয়ে পরিচয় দিয়ে সে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। এই নিয়ে তার অপর সহপাঠীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মঙ্গলবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, ওই রাতেই বিচারকের মেয়ে ফেসবুক মেসেঞ্জারে তার সহপাঠীদের বস্তির মেয়ে উল্লেখ করে পোস্ট দেয়। সে পোস্টে উল্লেখ বলে, ‘তোরা বস্তির মেয়ে। আমার মা সরকারি...। তোদের মায়েদের বল আমার মায়ের মতো .... হতে। ’

ওই পোস্টে বিচারকের মেয়ের ৪ জন সহপাঠী পাল্টা উত্তর দেয়। এই নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে মঙ্গলবার অভিভাবকদের ডাকতে বলেন ওই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে ওই ৪ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন। ওই সময় সেই বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হুমকি দিয়ে জেলে দেওয়ার কথা বলেন। এ সময় দুই অভিভাবককে ওই কর্মকর্তার পা ধরে ক্ষমা চাইয়ে নেওয়া হয়।

পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও এর জন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বাধ্য করেননি বলে দাবি করেছেন বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষিকা।

তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তার মেয়ে ও কিছু শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে বিচার বসানো হয়। এ সময় সেই কর্মকর্তা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জেলে দেওয়ার হুমকি দিলে দুজন অভিভাবক নিজে থেকে পা ধরে ক্ষমা চান। তাদের কেউ বাধ্য করেনি বা পা ধরতে বলেনি। ’

একই দাবি করেছেন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের সঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের সন্তানদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কাজ করে। যতটুকু জেনেছি সোমবার কর্মকর্তার মেয়ের ঝাড়ু দেওয়া কথা ছিল। তবে সে তিনমাস আগেই স্কুলে আসায় এই পরিবেশ হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি। এজন্য সে ঝাড়ু দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে কাজটি সম্পূর্ণ করে। এই সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে ক্রিটিসাইজ করে। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, এ কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ডাকা হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু অভিভাবকের মাফ চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেন। অভিভাবকেরা ভয় পেয়ে এভাবে মাফ চেয়েছেন। তাদের কেউ বাধ্য করেনি।

এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিনকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনাটি ইতোমধ্যে হাইকোর্ট জেনেছেন। আইন মন্ত্রণালয় জেনেছে। এ বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি করেছে। যিনি অপরাধী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন:
বগুড়ায় অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্য করার অভিযোগ বিচারকের বিরুদ্ধে

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।