ঢাকা: রাজধানীর রমনা থানায় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে আব্দুল মালেক ওরফে মশিউর মালেক নামে একজন আইনজীবী মামলা করেছেন। যে মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(২)/৩১/৩৫ ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের পক্ষে জামিন শুনানিতে এজাহারের এমন বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, (১) যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে,-(ক) ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যাহা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন, বা (খ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করার, বা বিভ্রান্তি ছড়াতে, বা তদুদ্দেশ্যে, অপপ্রচার বা মিথ্যা বলে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, বা প্রচার করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে সেই ব্যক্তির অনুরূপ কাজ হবে একটি অপরাধ। আর এই ধারায় অপরাধের শাস্তি ২৫(২) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং এখানে ব্যক্তিকে মামলা করতে হলে তাকে অবশ্যই সংক্ষুব্ধ হতে হবে। এজাহারকারী ব্যক্তিগতভাবে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন এমন কোনো কথা এজাহারের গর্ভে উল্লেখ নাই। বরং তিনি রাষ্ট্রে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের ঘটনায় তো ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের কাঁধে পড়ে। এই অভিযোগে ব্যক্তি কীভাবে মামলা দায়ের করেন?
বুধবার (২৯ মার্চ) ভোর চারটার দিকে সাভারের বাসা থেকে শামসুজ্জামান শামসকে তুলে নেয় সিআইডি। এদিন তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন গোলাম কিবরিয়া নামে এক ব্যক্তি। সেই মামলায় ওইদিনই শামসকে আদালতে আনার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা করা হয়নি।
এরপর বুধবার দিনগত রাতে রমনা থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করেন আবদুল মালেক ওরফে মশিউর মালেক নামের এক আইনজীবী। সেই মামলায় তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত শামসকে কারাগারে আটক রাখার আবেদনসহ বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকাল আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর দুইটার পর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে জামিন শুনানি হয়। জামিন আবেদনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার শুনানি করেন। শুনানিকালে এজলাস কক্ষে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ও সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক শামসকে এ সময় পুলিশি প্রহরায় লোহার গ্রিল বেষ্টিত কাঠগড়ায় রাখা হয়। শুনানিকালে তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেও তাকে স্বাভাবিক দেখা যায়।
শুনানিতে প্রথমে আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার বলেন, স্বাধীনতা দিবসে একজন দিনমজুর যার নাম জাকির হোসেনের একটি বক্তব্য ছাপা হয়। সেই বক্তব্যের সঙ্গে ভুলক্রমে সেখানে ফুল বিক্রি করা অন্য এক শিশুর ছবি ছাপানো হয়। ভুল ধরা পড়লে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ সেই সংবাদ সংশোধন করে ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে।
এরপর শুনানিতে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী মামলার বিভিন্ন আইনগত দিক বর্ণনা করেন। তিনি এজাহারের বক্তব্য আদালতে পড়ে শুনান। যেখানে বলা হয়, প্রথম আলো তাদের অনলাইন সংস্করণে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবে একটি মিথ্যা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রথম আলোর সেই প্রতিবেদক এবং সম্পাদক দেশের মহান স্বাধীনতা সম্পর্কে জনমনে বীতশ্রদ্ধা সৃষ্টির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বর্তমান শান্তিময় পরিস্থিতি বিঘ্নিত করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করাসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার হীন উদ্দেশ্যে অনলাইন মাধ্যমে সংবাদ প্রচার করে। যে কারণে জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে আইন শৃঙ্খলার অবনতির ঘটার উপক্রম হয়েছে।
এজাহারের বক্তব্য প্রসঙ্গে শুনানিতে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ব্যবস্থা নিতে হলে তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের কাঁধে পড়ে। একজন ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হয়ে এই মামলা দায়ের করতে পারেন কিনা সেটা আমরা বিজ্ঞ আদালতের কাছে প্রশ্ন রাখছি।
যেহেতু এই আসামিকে গ্রেফতারের পর দীর্ঘ সময় হেফাজতে রাখা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তের স্বার্থে তাকে আর জিজ্ঞাসাবাদের কোনো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। তাই এই আসামিকে মুক্তি দেওয়া হলে তিনি তদন্তে কোনো বিঘ্ন ঘটাবেন না। যেকোনো শর্তে তাকে জামিন দেওয়া হলে উপযুক্ত জামিনদার প্রদান করা হবে।
এরপর আদালতের আদেশে শামসুজ্জামান শামসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৩
কেআই/এমজে