নাটোর: নাটোরের সিংড়া উপজেলার এক কলেজছাত্রীকে অপহরণ করে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের দায়ে ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্ত সবাইকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
বুধবার (৫ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ আব্দুর রহিম এ রায় দেন।
এ মামলায় অভিযোগ প্রমাণ না পাওয়ায় নাছির হোসেন (৩১) নামে এক আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ধানাইদহ গ্রামের ছাব্বির আহমেদ (৩০), জামাইদিঘি গ্রামের রেজাউনুল হক (৩১), সিংড়া উপজেলার নাছিয়ারকান্দি গ্রামের নাজমুল ইসলাম (৩১), মহিষমারি গ্রামের রাজিবুল হাসান (৩০), দেবত্তর গ্রামের রিপন আলী (৩১) ও সিহাবপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৪০)। রায় ঘোষণার পরপরই তাদের নাটোর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সিংড়ার মহিষমারি গ্রামের মনিরুল ইসলাম (৩০), সিহাবপুর গ্রামের আতাউল ইসলাম (৩৪), খায়রুল ইসলাম (৩৭) ও রেজাউল করিম (৪২)। এ চারজন ও খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তি এখনও পলাতক।
নাটোর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুন্যালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (বিশেষ পিপি) অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ২০১২ সালে ১৯ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা ও রাজশাহী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী জরুরি কাজে বাড়ি থেকে বের হন। পথে প্রেমিক সাব্বির আহমেদের সঙ্গে তার দেখা হয়।
একপর্যায়ে সাব্বির বেড়ানোর কথা বলে নাটোরের সিংড়া উপজেলার পেট্রো বাংলা এলাকায় নিয়ে যান মেয়েটিকে। পরে সেখান থেকে প্রেমিক সাব্বির ও তার সহযোগী নাজমুল হক, মো. রাজিবুল হাসান, মো. রিপন ও মো. শহিদুল ওই কলেজছাত্রীকে অন্যত্র বেড়ানোর কথা বলে ভ্যানে করে কলম মির্জাপুর গ্রামে নিয়ে যান। ঘোরাফেরার একপর্যায়ে রাত হয়ে যায়। ওই সময় ওই ছাত্রী বাড়ি ফিরতে চাইলে তারা তাকে ভয় দেখান। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কলম মির্জাপুর এলাকার ঈদগাঁ মাঠে নিয়ে সাব্বির আহমেদ, মনিরুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম, আতাউল ইসলাম ও রেজাউল করিমসহ কয়েকজন মিলে রাতভর মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। এতে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বিষয়টি স্থানীয় লোকজন জানতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে ওই ছাত্রীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন। সেই সঙ্গে পালানোর সময় ধর্ষণকারীদের তারা আটক করেন। পরে খবর দেওয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশের কাছে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। অন্যদিকে স্থানীয়রা ওই কলেজছাত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিলে তারা হাসপাতালে ভর্তি করেন।
পরদিন ২০ অক্টোবর সকালে ওই কলেজছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে সিংড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি সিংড়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হায়দার মো. ফয়জুর রহমান তদন্ত করেন। তদন্তকালে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান ও রওশন আলম আসামিদের স্বীকারোক্তি নথিভুক্ত করেন। তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ২৩ জানুয়ারি গ্রেপতার করা আট আসামি ও পলাতক তিন আসামিসহ মোট ১১ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। পরে মামলাটি বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যায়।
তবে ২০১২ সালেই বাদীর আপসনামা জমা দিয়ে মামলাটির সব আসামি নাটোরের ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছিলেন। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে আসামিদের জামিন বাতিল করেন এবং ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপিকে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। আপসের বিষয়টি তৎকালীন আইনসচিব নিজেই সরেজমিন তদন্ত করেছিলেন। পরে ফের মামলাটি বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে চলে যায়।
এরপর দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মামলার শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। সব তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বুধবার এ রায় দেন বিচারক।
অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান বলেন, এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২৩
এসআই