যশোর: যশোরে আইনজীবীদের পোশাক কালো গাউন পরা অবস্থায় রিকশাচালককে প্রকাশ্যে মারধর করার ঘটনায় অভিযুক্ত আইনজীবী আরতি রানি ঘোষকে কারণ দর্শাতে বলা (শোকজ) হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ মে) যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজার সই করা নোটিশটি আরতি রানির বাড়িতে পাঠানো হয়।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা ছোট বলেন, সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গাউন পরা অবস্থায় একজন রিকশাচালককে প্রকাশ্যে মারধর করা আইনজীবীদের জন্য মর্যাদাহানিকর। এ বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আরতি রানি ঘোষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, যশোরে চলন্ত রিকশায় দুর্ঘটনাবসত পথচারী ওই নারী আইনজীবী সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে চালককে পিটিয়ে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে দেশব্যাপী আলোচিত হলেও যশোরে ‘টক অব দ্য টাউনে’ পরিণত হয়েছে।
আজ সকাল থেকে আদালতপাড়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঘটনাটি। তবে অভিযুক্ত ওই নারী আইনজীবীকে আদালতে আসতে দেখা যায়নি এবং ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে। আর ঘটনাটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে রোববার (০৭ মে) রাতেই ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
এর আগে, রোববার (০৭ মে) যশোর আদালতের সামনে শেখ মুজিবুর রহমান সড়কে (মুজিব সড়ক) তুচ্ছ এ ঘটনাটি ঘটে। এ সময় উত্তেজিত নারী আইনজীবী আরতি রানি ঘোষ ওই রিকশাচালককে মারধর করেন।
নারী ওই আইনজীবী শহরের আম্বিকা বসু লেনের মৃত নীলরতন ঘোষের মেয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই আইনজীবীর কাছে রিকশাচালক মাফ চেয়ে এবং উপস্থিত লোকজন থামতে অনুরোধ করেও নিবৃত করতে পারেনি। রিকশাচালককে একনাগাড়ে এলোপাতাড়ি চড় মারার সঙ্গে জুতাপেটাও করেছেন।
অভিযুক্ত আইনজীবী আরতি রানি দাবি করেন, তিনি কোর্ট শেষে ফেরার পথে সড়ক অতিক্রম করতে গেলে ওই রিকশাচালক তাকে ধাক্কা দেন। এতে তিনি পড়ে গিয়ে আহত হন। তিনি পায়ে ও মাথায় প্রচণ্ড আঘাতও পেয়েছেন। এ কারণে নিজেকে সামাল দিতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে তিনি এটি করেছেন।
এমন আচরণ করা ঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওকে কী পূজা করব?’ ওই আইনজীবীর দাবি, রিকশাচালককে মেরে তিনি সঠিক কাজ করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৬ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, কালো গাউন পরা ৫০ বছর বয়সী এক নারী আইনজীবী রিকশাচালককে জামার কলার ধরে রিকশা থেকে নামিয়ে একের পর এক চড় মারছেন। মারতে মারতে তাকে রিকশার চাবি নিয়ে পৌরসভায় যেতে বলেন।
জামার কলার ধরে বারবার রিকশাচালককে পৌরসভায় নিয়ে লাইসেন্স বাতিল করার হুমকিও দিতে দেখা যায়। এ সময় রিকশাচালক হাত উঁচু করে মাফ চান। বারবার রিকশাচালক আকুতি-মিনতি করলেও ওই আইনজীবীর মন গলতে দেখা যায়নি। বরং তিনি আরও চড়াও হয়ে এলোপাতাড়ি চড় মারতে থাকেন। এ সময় সড়কে পথচারীরা ওই আইনজীবীকে থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
ভিডিওতেই এক পথচারীকে বলতে শোনা যায়, ওই নারী আইনজীবী রিকশাচালককে জুতাপেটাও করেছেন। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলেও ওই আইনজীবী রিকশাচালককে চড়-থাপ্পড় মেরেই যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে এক নারী এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করলে ক্ষান্ত হন তিনি। এ সময় চালক রিকশা নিয়ে চলে যান।
ঘটনাটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ওই দিনই যশোর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলী মোর্তজা ছোট ‘ঘটনাটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত দাবি করে বলেছিলেন, এ ঘটনা আমাদেরকে বিব্রত করেছে। এছাড়াও এ ঘটনায় আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২৩
ইউজি/এএটি