ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগে সব ধরনের পরীক্ষার সময়ে পরীক্ষার্থীর পরিচয় শনাক্তে কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার নোটিশ স্থগিত করে দেওয়া হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে দুই মাসের মধ্যে হাইকোর্টে এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করতে বলেছেন।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (২৮ মে) বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী বেলায়েত হোসেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. ফয়জুল্লাহ ফয়েজ। ঢাবির পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
পরে আইনজীবী ফয়জুল্লাহ ফয়েজ জানান, ঢাবির বাংলা বিভাগের বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আগামী দুই মাসের মধ্যে হাইকোর্টের জারি করা রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালত বলেছেন, বাংলা বিভাগের পরীক্ষা চলাকালে ছাত্রীদের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু মুখমণ্ডল খোলা রাখতে হবে।
এর আগে ২৮ মার্চ শিক্ষার্থীদের পক্ষে করা রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ নোটিশের ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এর বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে।
গত ১১ ডিসেম্বর বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান একটি বিজ্ঞপ্তি দেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে জানানো যাচ্ছে যে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলা বিভাগের একাডেমিক কমিটি সর্বসম্মতভাবে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে: ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী, বাংলা বিভাগের প্রতি ব্যাচের সংযোগ ক্লাস (টিউটোরিয়াল/প্রেজেন্টেশন), মিডটার্ম পরীক্ষা, চূড়ান্ত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থীকে পরিচয় শনাক্ত করার জন্য কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখতে হবে। ’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ সিদ্ধান্ত প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষকগণ ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের অবহিত করেছেন। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো শিক্ষার্থী এ সিদ্ধান্ত পালনে শৈথিল্য দেখাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়: ‘১৮ সেপ্টেম্বর গৃহীত সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে যারা পালন করবে না তাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’
এ বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়। রিটে শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্টার ও বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়।
আবেদনে ওই নোটিশকে কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত ঘোষণা করা হবে না এবং ওই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার ও মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় আচার পালনে বাধা না নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- এ মর্মে রুল জারির আবেদন করা হয়। পাশাপাশি রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় ওই বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়। এই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ স্থগিতাদেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
ইএস/এমজেএফ