ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

আইন ও আদালত

মৃত্যুর ২১ বছর পর মামলা থেকে অব্যাহতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২৩
মৃত্যুর ২১ বছর পর মামলা থেকে অব্যাহতি ফাইল ফটো

ঢাকা: চল্লিশ বছর আগে অর্থ ও গম আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছিল এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। পাঁচ বছর পর বিচারিক আদালতে পাঁচ বছরের দণ্ড দেওয়া হয়।

সে রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর আপিল করেছিলেন ওই চেয়ারম্যান। কিন্তু সে আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার ২১ বছর আগে পরপারে পাড়ি জমান সেই চেয়ারম্যান।

২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি সে আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। সম্প্রতি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।

ঘটনার যেভাবে শুরু

১৯৮২ সালে রাজশাহীর চারঘাট থানার বাজুবাঘা ইউনিয়নের একটি স্কুলের জন্য দেওয়া কয়েকটি হাটের ইজারার টাকা, বিভিন্ন প্রজেক্টের অর্থসহ ট্যাক্সের ৪০ হাজারের অধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে চেয়ারম্যান আব্দুস সোবহান সরকারের বিরুদ্ধে। সহকারী কমিশনার মো.ইছাহাক আলীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ নিয়ে মামলা করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা ১৯৮২ সালের ২৯ মার্চ প্রতিবেদন দেন।

বিচার শেষে ১৯৮৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রায় দেন রাজশাহী বিভাগীয় স্পেশাল জজ মো.আব্দুল কাদের খান। রায়ে ৫ বছরের দণ্ড এবং ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেন। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাইকোর্টে আপিল করেন।

ঘটনার সমাপ্তি যেভাবে

কিন্তু দীর্ঘদিন এ আপিল আর শুনানি হয়নি। কিন্তু প্রধান বিচারপতি এসব পুরাতন আপিল মামলার শুনানির উদ্যোগ নিলে এ মামলাটিও কার্যতালিভুক্ত হয়।  

এরপর শুনানি শেষে বিচারপতি মো.আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো.সোহরাওয়ারদীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি রায় দেন। এর আগে ৮ ডিসেম্বর ও ১৯ জানুয়ারি শুনানি হয়।  

হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে বলা হয়, এ মামলার আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ২৪ জানুয়ারি দুদকের আইনজীবী একটি হলফনামা দেন। সেখানে বলা হয়, বাজুবাঘা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ১২ জানুয়ারি আপিলকারী ২০০১ সালের ১৩ জুন মারা যান। সুতরাং ফৌজদারি কার্যবিধি ৪৩১ ধারা অনুসারে অন মেরিটে দণ্ড ও সাজার বিষয়ে আপিল নিষ্পিত্তর সুযোগ নেই।

তবে প্রসিকিউশন সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষককে এক্সামিন করতে ব্যর্থ হয়েছে।  এছাড়া অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি। তাই এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেতে পারেন আপিলকারী। তার বিরুদ্ধে দেওয়া রায় এবং দণ্ডাদেশ ও জরিমানার আদেশ বাতিল করা হলো। ফলে আপিল মঞ্জুর করা হলো।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া মিতি, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনুজমান আরা বেগম ও কাজী শামসুন নাহার কণা।

দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহীন আহমেদ। তবে আপিলের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।  

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী শাহীন আহমেদ বলেন, এ মামলার আপিলের পর আর কেউ খোঁজ রাখেনি। না রাষ্ট্রপক্ষ না দুর্নীতি দমন ব্যুরো। আসামিপক্ষও  না। এর মধ্যে ২০০৪ সালের আইনে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়। তখন হয়ত পুরোনো মামলার আর খোঁজ রাখতে পারেনি দুদক। ২০১৯ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন পুরোনো মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন। এরপর এ ধরনের মামলাগুলো শুনানির জন্য কার্যতালিকাভুক্ত হয়।

এরমধ্যে দুদক জানতে পারে ওই চেয়ারম্যান ২০০১ সালে মারা গেছেন। বিষয়টি হাইকোর্টকে অবহিত করার পর আপিলটি নিষ্পত্তি করে দেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২৩
ইএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।