ঢাকা: চেক প্রতারণার অভিযোগে আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম সিকদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যক্তি। গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি মামলা দুটি করেন।
এ অবস্থায় তিনি আদালত থেকে জামিন নিলে মামলাটি চলতি বছর ৮ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী বিচারের জন্য বদলির আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউল্লাহর আদালত। সেই থেকে প্রায় ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য কোনো আদালতে যায়নি মামলাটি। প্রতিনিয়ত বদলির তথ্য খুঁজতে গিয়ে হয়রান এই মামলা সংশ্লিষ্টরা।
শুধু এই মামলা নয়, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে চেকের প্রতিটি মামলা বদলির পর দায়রা আদালতে তারিখ পড়তে ক্ষেত্র বিশেষে এক বছর বা তার বেশি পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এ নিয়ে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আদালত স্বল্পতার কারণেই এই বিলম্ব হচ্ছে।
যখন কেউ স্বাক্ষরিত চেক রেখে টাকা নেন, তখন সেই টাকা পরিশোধ না হলে চেকের টাকা উদ্ধারের জন্য ১৮৮১ সালের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ বা ১৪০ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে ব্যাংক থেকে চেকটি ডিজঅনার করাতে হয়। এরপর টাকা চেয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠাতে হয়। লিগ্যাল নোটিশে অন্তত ৩০ দিন সময় দিতে হয়। সেই সময়ের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে চেক প্রতারণার মামলা করতে হয়। এই মামলার বিচার হয় যুগ্ম দায়রা আদালতে। তাই ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়েরের পর তা বিচারের জন্য প্রস্তুত হলে দায়রা আদালতে বদলি করা হয়। সেখান থেকে দায়রা নম্বরসহ একটি যুগ্ম দায়রা আদালতে দায়রা মামলাটি বিচারের জন্য পাঠানো হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৯ (গ) ধারা মোতাবেক মামলা প্রাপ্ত হওয়ার ৩৬০ দিনের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। সেখানে আদালত বণ্টনেই দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়। ঢাকার মহানগর এলাকায় চেক ডিজঅনার মামলা দায়ের থেকে রায় পর্যন্ত ক্ষেত্র বিশেষে ৫ বছর বা তার চেয়েও অধিক সময় লেগে যায়।
ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশের পর দুই মাসের মধ্যে বিচারের জন্য আদালত বণ্টন হলেও মহানগর দায়রা জজ আদালতে এর জন্য ৬ মাস থেকে এক বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় লেগে যায়। আইনজীবীরা বলছেন, বদলি মামলা রেজিস্ট্রারভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম না থাকার কারণেই এই বিলম্ব হয়। সিএমএম আদালতে ঢাকা মহানগর এলাকার ৪১টি থানার আমলি আদালত রয়েছে। এই আদালত থেকে চেকের সকল মামলা বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়। তবে সব থানার মামলা একটি মাত্র রেজিস্টারে উঠানো হয়। দুই থেকে তিন মাস পর নতুন একটি খাতা বের হয়। সেই রেজিস্টারে নিজের মামলার তথ্য নিতে দিনভর ভিড় থাকে আইনজীবী ও তার সহকারীদের। বছরব্যাপী খাতা দেখেও শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত মামলার তথ্য অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। এভাবে একটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে মামলার বিচার সামনে এগোয়।
চেক ডিজঅনার মামলায় বদলির ক্ষেত্রে এমন অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা। জানতে চাইলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট এইচ এম মাসুম বলেন, বদলি রেজিস্টারে মামলা কোন নিয়মে ওঠে তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। অনেক ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ তদবির করে মামলা উঠিয়ে নেয়। আবার অনেককে দীর্ঘদিন ঘুরতে হয়। এ কারণে অনেক সময় তথ্য পাওয়ার আগেই বিচার শেষ হওয়ার নজিরও আছে। চেক ডিজঅনারের বদলি মামলার ক্ষেত্রে অন্তত ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে হয়রানি অনেকটা লাগব হতো।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল অবশ্য এজন্য দায়ী করছেন মামলার চাপ এবং আদালতের স্বল্পতাকে। জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ঢাকার মহানগর এলাকায় যুগ্ম দায়রা জজ আদালত সংখ্যা ৯টি। যেখানে চেক সংক্রান্ত ৭৭ হাজার মামলা বিচারাধীন আছে। এই মামলার চাপ নিয়ে বিচারকাজ সম্পন্ন করা দুরোহ ব্যাপার হয়ে গেছে। বদলির ক্ষেত্রে আগের চেয়ে দুর্ভোগ কমেছে। তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়রা আদালতে আসার পর থেকে সিরিয়াল অনুযায়ী মামলা রেজিস্টারে ওঠানো হয়ে থাকে। তবে মামলার চাপের কারণে বদলি রেজিস্টারে উঠতে হয়তো কিছুটা বিলম্ব হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২৩
কেআই/এমজেএফ