মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জে চাঞ্চল্যকর দুটি হত্যা মামলায় চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক এ রায় দিয়েছেন
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরের দিকে মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক সাবিনা ইয়াসমিন এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-জেলার দৌলতপুর উপজেলার উয়াইল এলাকার মৃত সাহেব আলীর ছেলে কফিল ও আওলাদ, একই এলাকার তৈমুদ্দিনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি এলাকার ব্রজেন্দ্রু মণ্ডলের ছেলে রঞ্জিত কুমার মণ্ডল।
দৌলতপুর থানার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি বিকেলের দিকে মেয়ে বীথি (৮) এবং ছেলে রাকিবকে (৫) নিয়ে দৌলতপুরের কেলিয়া বাজারে যায় বাবা আ. রশিদ এবং তার চায়ের দোকানে বসে মেয়ে বীথি। ছেলে রাকিব আগেই চলে যায় বাড়িতে কিন্তু বীথি মাগরিবের আজানের পর বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। আ. রশিদ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাড়ি গিয়ে বীথির খোঁজ জানতে চায় তার স্ত্রীর কাছ থেকে কিন্তু সে বলেও-তো এখনও বাড়িতে ফিরেনি। তারপর থেকে আশপাশে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি, বাজার ঘাটে খোঁজাখুঁজিসহ মাইকিং করা হয়। পরে ২৬ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে উয়াইল চলে স্থানীয়রা বীথির মরদেহ দেখতে পায়।
এজাহারে আরও জানা যায়, মৃত সাহেব আলীর ছেলে কফিল আ. রশিদের বাপ-চাচার জমিতে স্যালো মেশিন বসায় এবং কিছুদিন পরই সেই স্যালো মেশিন চুরি হয়। তাদের (স্যালো মেশিন) চুরির অপবাদ দেয় এবং চুরি যাওয়া স্যালো মেশিন অন্যত্র থেকে উদ্ধার হয়। মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার কারণে আ. রশিদরা নিজেরাই নিজেদের জমিতে স্যালো মেশিন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন করে নিজেদের জমিতে স্যালো মেশিন বসানোকে কেন্দ্র করে কফিল, হেলাল, আওলাদ ক্ষুব্ধ হয়ে হুমকি দেন। শত্রুতার জেরে বীথি বাড়ি যাওয়ার পথে কফিল, হেলাল, আওলাদসহ অজ্ঞাতনামা আর ৩-৪ জন পরস্পর যোগসাজশে তাকে আরশেদ মাস্টারের ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।
সব সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কফিল, আওলাদ, দেলোয়ার হোসেন দেলুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলার অপর আসামি হেলালের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জ সদর থানার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে সরস্বতীর মামা প্রদীপ কুমার মোদক জানতে পারে রঞ্জিত মণ্ডলের খামারে তার ভাগনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তরা বাজারের শক্তি মেডিকেলে নিয়ে আসে স্থানীয়রা পরে ওই মেডিকেল হলের ডা. প্রমোদ চক্রবর্তী সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। প্রদীপ মোদক ও স্থানীয় মেম্বার অমূল্য মণ্ডল সরস্বতীকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে এবং তার কিছু সময় পর রঞ্জিত ও তার মা আসে হাসপাতালে। সরস্বতীকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পান মাথার ডানে ও বামে ধারালো অস্ত্রের কাটা ও রক্তাক্ত জখম দেখতে পান। তখন সুকৌশলে রঞ্জিত ও তার মা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। সরস্বতীর মাথায় রক্তাক্ত জখমের কারণে তার মৃত্যু হয়।
সব সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে রঞ্জিত মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রঞ্জিত কুমার মণ্ডল পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোনাসহ সাজা পরোয়ানা ইস্যু করা হয়।
মামলার অপর অভিযুক্ত আসামি আতোয়ার হোসেন ওরফে আতাইয়ের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ না হওয়ায় আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। আসামির জামিন দাতাকে জামিননামার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে বীথি হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন মথুনাথ সরকার এবং আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন এ কে এম আজিজুল হক।
অপর দিকে সরস্বতী হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মথুরনাথ সরকার এবং আসামির পক্ষের আইনজীবী ছিলেন ফারুক মোল্লা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৩
জেএইচ