ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

পেট্রল বোমায় নিহত গণেশের পরিবার ভারতে, ৮ বছরেও শুরু হয়নি বিচার

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৩
পেট্রল বোমায় নিহত গণেশের পরিবার ভারতে, ৮ বছরেও শুরু হয়নি বিচার প্রতীকী ছবি

সিরাজগঞ্জ: ২০১৪-১৫ সালে হরতাল-অবরোধ চলাকালে সারা দেশের মতো সিরাজগঞ্জেও ঘটেছে বেশ কিছু নাশকতার ঘটনা। ককটেল, পেট্রল বোমা কিংবা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য যানবাহন।

 

ওই সময় জেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও আলোচিত ছিল পেট্রল বোমা হামলায় পান বিক্রেতা গণেশ দাস (৩০) নিহত হওয়ার ঘটনা। ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি রাতে কড্ডা-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে রামগাঁতী এলাকায় সিএনজিচালিত যাত্রীবাহী একটি অটোরিকশায় এ পেট্রল বোমা হামলার ঘটনাটি ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন গণেশ দাস। দগ্ধ হন অটোরিকশাচালক আলীসহ তিনজন যাত্রী।  

এ ঘটনায় সিরাজগঞ্জ সদর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) দুলাল হোসেন বাদী হয়ে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজিবর রহমান লেবু, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, যুগ্ম সম্পাদক রাশেদুল হাসান খান রঞ্জন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ সুইটসহ বিএনপি-জামায়াতের ১৪৯ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

জেলার আলোচিত এ ঘটনার আট বছর পার হলেও এখনও শুরু হয়নি মামলার বিচার কার্যক্রম। মামলাটির ভিন্ন দুটি ধারা দুই আদালতে শিফট হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আদালতেই চার্জ গঠনই করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে ঘটনার পরের বছরই নিহত গণেশের পুরো পরিবার ভারতে পারি জমান। ফলে হত্যার বিচার দাবিতে ভিকটিমের পরিবারের কোনো চাপ না থাকায় ঢিমেতালে চলছে পুলিশি বাদী হয়ে দায়ের করা মামলাটি।

সম্প্রতি নিহত গণেশের বানিয়া পট্টির ভাড়া বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, প্রায় ছয় বছর আগে গণেশের স্ত্রী রুপালি দাসের দুই সন্তান গৌরব দাস (১৩) ও সৌরভ দাসকে (৩) নিয়ে ভারতে পারি জমিয়েছেন। গণেশের রেখে যাওয়া পানের দোকানটি এখন তার শ্যালক অমৃত প্রামাণিক চালাচ্ছেন। তবে গণেশ হত্যা মামলার বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না তিনি।

অমৃত প্রামাণিক জানান, গণেশের বাবা-মা ও পাঁচ ভাই আগে থেকেই ভারতে থাকতেন। বাংলাদেশে গণেশ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একাই থাকতেন। বাংলাদেশে তাদের কোনো বাড়িঘর না থাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। গণেশ নিহত হওয়ার এক বছর পর স্ত্রী রুপালি দাস দুই সন্তানকে নিয়ে ভারতে চলে গেছেন। সেখানে দেবর অর্থাৎ গণেশের ছোট ভাই দিলীপ দাসকে বিয়ে করেছেন। গণেশের ছেলে দুটি সেখানেই পড়াশোনা করছে। বোন রুপালির সঙ্গে যোগাযোগও হয় তার।

অমৃত আরও জানান, ওই সময় নিহত গণেশের দুই ছেলের নামে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়েছিল। অনুদানের টাকা সিরাজগঞ্জ সোনালী ব্যাংকে রয়েছে। দুই ছেলে সাবালক হলেই সেই টাকার মালিক হবেন।

এদিকে, গণেশ হত্যা মামলার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জ সদর থানার তৎকালীন এসআই বর্তমানে পাবনার সাথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ২০১৬ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরে মামলাটি নিম্ন আদালত থেকে জেলা ও দায়রা আদালতে যায়। সেখান থেকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে এবং সর্বশেষ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতে মামলাটি রয়েছে। ইতোমধ্যে মামলাটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। পেনাল কোটের ৩০২ ধারায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতে এবং ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (১) (এ) ধারায় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই মামলায় ১৪৯ জন আসামি ছিলেন। তদন্তের পর ১৩০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) জমা দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জে যুগ্ম জজ তৃতীয় আদালতের অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট মহসিন খান রানা বলেন, মামলা ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (১) (এ) ধারার অংশটি বিভিন্ন সময় আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চার্জ গঠনের তারিখ পিছিয়ে গেছে। চার্জ গঠনের জন্য আগামী তারিখে আদালতে আবেদন করা হবে।  

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. শামসুল আলম বলেন, আমাদের আদালতে মামলাটি শিফট হয়েছে ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর। এরপর তিন দফায় আসামির মৃত্যু প্রতিবেদন ও আসামিপক্ষের ডিসচার্জ পিটিশনের কারণে চার্জ গঠনের তারিখ বারবার পিছিয়ে যায়। সর্বশেষ আসামি রেলওয়ে কলোনির সুমনের মৃত্যুতে চার্জ গঠন পেছায়। আগামী ২৩ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য রয়েছে। আশা করছি, এদিন অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।