সিলেট: ২০০২ সালের ঘটনা। যাত্রী বেশে ৩ ছিনতাইকারী চালক জিলু মিয়াকে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।
অবশেষে বাদীর অনুপস্থিতিতে রোববার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে সিলেটের দ্রুত বিচারক ট্রাইব্যুনালে হলো চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায়। রায়ে ৪ আসামির একজনকে মৃত্যুদণ্ড ও দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও একজনকে খালাস প্রদান করা হয়েছে।
এদিন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ দায়রা জজ স্বপন কুমার সরকার এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট সারোয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রায়ে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কাটলীপাড়ার মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ওরফে আশরাফ ওরফে আশাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি আরও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ৩৯৪ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
অপর দুই আসামি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট কামরাবন্দ গ্রামের মৌলভী হোসেন আহমদের ছেলে নাজির আহমদ ওরফে নাজির ওরফে নজরুল ইসলাম ও সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি মাঝপাড়া এলাকার মোতালেব মিয়ার ছেলে আবু চান ওরফে সাব্বিরকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ৩৯৪ ধারায় আরও ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায় ঘোষণাকালে আবু চান ওরফে সাব্বির আহমদ ব্যতীত অপর আসামিরা পলাতক। এছাড়া আসামি ছায়েক আহমদ ওরফে ছালেক মিয়াকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আদালত সূত্র জানায়, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ঝাঝর এলাকার চেরাগ আলীর ছেলে জিলু মিয়া পার্শ্ববর্তী নাছিমপুর এলাকার সিদ্দিক আলীর অটোরিকশা ভাড়ায় চালাতেন। প্রতিদিনের ন্যায় ২০০২ সালের ২৭ নভেম্বর সকাল ৮টায় ভাড়ায় চালানোর জন্য বের হন। রাত ৯টার দিকে আসামিরা যাত্রী বেশে উপজেলার নাজিরবাজার থেকে ফরিদপুর সড়কের আবদার খালের পূর্বপাশে নিয়ে জিলু মিয়াকে পেটে ছুরিকাঘাত করে হত্যার পর অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার একদিন পর ২৯ নভেম্বর দক্ষিণ সুরমা থানায় নিহতের বাবা একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি জিআর-১৫১/২০০২ মূলে আদালতে বিচারের জন্য আসে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর থেকে হত্যা মামলাটি বিভিন্ন আদালত ঘুরে দ্রুত বিচার আদালতে ২৮৪৭/১৩ বিচারের জন্য আসে। দীর্ঘদিন হয়ে যাওয়ায় মামলার বাদী কেউই এ মামলায় তদবির করেননি।
রোববার (১৯ নভেম্বর) চাঞ্চল্যকর রায় ঘোষণার তারিখ ছিল। এ সময় নিহত জিলু মিয়ার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তথাপি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ন্যায় ও সুবিচার সুনিশ্চিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
পিপি অ্যাডভোকেট সারোয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল বলেন, ঘটনার রাতে চালক জিলু মিয়ার অটোরিকশায় যাত্রী বেশে তিনজন ছিনতাইকারী উঠেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র আশরাফ নামের আসামি জিলু মিয়াকে ছুরিকাঘাত করে রাস্তায় ফেলে তার সহযোগীদের নিয়ে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। একজন পথচারী মারাত্মক জখম অবস্থায় তাকে নিকটস্থ বাজারে নিয়ে যান। পরে অটোরিখমার মালিক ও বাদীসহ তাকে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়ার পর ওইদিন ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জিলু মিয়া মারা যান।
তিনি বলেন, এই ঘটনার পর একইভাবে অপর একটি অটোরিখমা ছিনতাইকালে আশরাফ হাতেনাতে ধরা পড়ে এবং অন্যরা পালিয়ে যায়। সে জিলু মিয়াকে ছুরিকাঘাত করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করে। তার দেখানো মতো ছিনতাইকৃত অটোরিকশা ও চাবি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ তদন্ত শেষে চারজন আসামিকে চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয়। মামলায় ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। এ হত্যা মামলায় ন্যায় বিচার সুনিশ্চিতে চেষ্টা করে গেছে।
আসামি পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট খিজির আহমদ এবং পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৩
এনইউ/জেএইচ