ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ফোরামের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা, সভাপতির দায়িত্বে ব্যারিস্টার খোকন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২৪
ফোরামের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা, সভাপতির দায়িত্বে ব্যারিস্টার খোকন

ঢাকা: বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদে দায়িত্ব নিয়েছেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন)।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি দায়িত্ব নেন।

তাকে ফুল দিয়ে গ্রহণ করেন বিদায়ী সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। পরে বক্তব্য দেন মাহবুব উদ্দিন খোকন।  

এর আগে দলীয় আইনজীবী ও সমমনা আইনজীবীদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মতামত নেন ব্যারিস্টার খোকন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে এ মতবিনিময় সভা হয়।

ভোট গণনার সময় দলীয় আইনজীবীদের অনুপস্থিতিকে দায়ী করে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, পাহারা দিলে আমরা ১২টার মতো পদে বিজয়ী হতাম। মতবিনিময় সভা শেষে বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দেন তিনি।

এর আগে, বিএনপি সমর্থিত বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অপর তিনজনকে দায়িত্ব নেওয়া থেকে বিরত থাকতে গত ২৭ মার্চ চিঠি দিয়েছিল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।

চিঠিতে সই করেন ফোরামের সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী এবং মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এ চিঠির অনুলিপি দলের মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব (দপ্তরের দায়িত্বে নিয়োজিত) বরাবর পাঠানো হয়।

এবারের নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে সভাপতিসহ চারটি পদে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল। অপরদিকে সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিজয়ী হয় সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। গত ৬ ও ৭ মার্চ নির্বাচন শেষে ৯ মার্চ দিবাগত রাতে ভোট গণনা শেষে ফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ীরা হলেন- সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন); সদস্য সৈয়দ ফজলে এলাহী, ফাতিমা আক্তার ও মো. শফিকুল ইসলাম শফিক।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ীরা হলেন- সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির, সদস্য মো. বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, মো. রায়হান রনি ও রাশেদুল হক খোকন।

নির্বাচনে এই দুই প্যানেল ছাড়াও সভাপতি পদে মো. ইউনুছ আলী আকন্দ ও মো. খলিলুর রহমান বাবলু (এম কে রহমান), সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা যুথি ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া এবং কোষাধ্যক্ষ পদে মো. সাইফুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছিলেন।

মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বিগত দুই বছরের মতো এবারের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা নজিরবিহীনভাবে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফল ঘোষণা করেছে। এমনকি সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ দলীয় দুজন প্রার্থী- প্রথমে নাহিদ সুলতানা যুথী ও পরে শাহ মঞ্জুরুল হককে তথাকথিত বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।  

এতে বলা হয়, ক্ষমতাসীন দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের অব্যবহিত পরে সমিতির অডিটোরিয়ামে হামলা চালিয়ে আইনজীবীদের মারধর ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনা আওয়ামী লীগের দুজন সম্পাদক পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত হলেও সরকারের একজন বেতনভুক্ত আইন কর্মকর্তা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ও আরও তিনজন আইনজীবী ফোরামের নেতাকে আসামি করে শাহবাগ থানায় একটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন।

এতে বলা হয়, মামলায় ওসমান চৌধুরী, সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুসকে (কাজল) গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তারা দুই সপ্তাহের মতো কারাভোগ করেছেন। তাদের কারাগারে রেখে গত ১০ মার্চ লুট হয়ে যাওয়া ব্যালট পেপার গণনার নাটক সাজিয়ে তথাকথিত ফল ঘোষণা করা হয়। যে নির্বাচনে আমাদের পুরো প্যানেলেরই বিজয় সুনিশ্চিত ছিল, সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি জায়েজ করতে আপনাদের (বিএনপির বিজয়ী চারজন) নামকাওয়াস্তে বিজয়ী দেখানো হয়েছে। আইনজীবী সমাজ ও দেশের আপামর জনগণ নির্বাচনের এ ফল প্রত্যাখ্যান করেছে। ইতোমধ্যে আমাদের সভাপতি পদপ্রার্থী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন পুনঃনির্বাচন দাবি করেছেন, যা দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ২৪ মার্চ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং সম্পাদকদের এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের পর ঘোষিত ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে ন্যায়সংগত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে, আপনাদের জানানো যাচ্ছে যে, আপনারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২০২৫ এর মেয়াদকালের দায়িত্ব নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসবে দলীয় এ সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২৪
ইএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।