ঢাকা: কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তেও রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ ও অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি পিবিআই পুনঃতদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করে।
রোববার (২ জুন) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক শওকত আলীর আদালতে এ প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে এ মামলার বাদী ও কলেজছাত্রীর বাবা সাইফুল ইসলাম নারাজি প্রতিবেদন দেবেন উল্লেখ করে সময় আবেদন করেন। এরপর আদালত আগামী ১৩ জুন শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।
গত বছর দুই আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করে প্রথম দফায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়নি এবং কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের সহযোগিতার অভিযোগও প্রমাণ হয়নি। মামলা দায়ের তথ্য গত ভুল রয়েছে। তাই আসামিদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
এরপর ওই বছর ১৪ নভেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরী মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-৮ এ বদলির আদেশ দেন। সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেন বাদী। বাদীর দেওয়া নারাজি আবেদনের শুনানি শেষে গত ১৪ মার্চ মামলা পুনঃতদন্তের জন্য পিবিআইকে আদেশ দেন আদালত।
২০২৩ সালের ১ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে কলেজছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকেও আসামি করা হয়। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নিয়ে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন।
মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, তার মেয়ে (ভিকটিম) মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। অভিযুক্ত মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ভিকটিমকে ক্লাস থেকে প্রিন্সিপালের কক্ষে ডেকে নিতেন। খোঁজ-খবর নেওয়ার নামে তিনি ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। কয়েকদিন পর অভিযুক্ত মুশতাক ভিকটিমকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ভিকটিমকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে এবং তাকে ও তার পরিবারকে ঢাকা ছাড়া করবে বলে হুমকি দেন মুশতাক। ভিকটিম এ রকম আচরণের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। অধ্যক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছি বলে মুশতাককে তার রুমে নিয়ে আসেন এবং ভিকটিমকেও ক্লাস থেকে নিয়ে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে অভিযুক্তকে সময় ও সঙ্গ দিতে বলেন।
এ বিষয়ে বাদী প্রতিকার চাইতে গেলেও কোনো সহযোগিতা করেননি অধ্যক্ষ বরং অভিযুক্ত মুশতাককে অনৈতিক সাহায্য করেন তিনি। বাদী উপায় না পেয়ে ওই বছর ১২ জুন ভিকটিমকে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে নিয়ে গেলে অভিযুক্ত মুশতাক তার লোকজন দিয়ে ভিকটিমকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এরপর বাদী জানতে পারেন তিনি ভিকটিমকে একেক দিন একেক স্থানে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেছেন এবং যৌন নিপীড়ন করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২৪
কেআই/আরআইএস