ঢাকা: একটি ধর্ষণ মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন্সের (পিবিআই) অনুসন্ধানের বৈধতা নিয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার (৪ জুন) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন জানান, একজন ভিকটিম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করতে থানায় গেলেন। কিন্তু থানা মামলাটি নিতে অস্বীকৃতি জানালে ভিকটিম আইনের ২৭ ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের কাছে দরখাস্ত দেন। আইনে আছে, ট্রাইব্যুনাল জবানবন্দি নিয়ে সন্তুষ্ট হলে ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেবেন। এক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
কিন্তু আসামিপক্ষের বক্তব্য হলো, পিবিআই পুলিশের অংশ। তারা এটা পারবে না। কারণ এর আগে আপিল বিভাগ এক রায়ে বলেছেন, এ ধরনের মামলা পুলিশের কাছে পাঠাতে পারবে না। এ অবস্থায় আসামিপক্ষের আবেদনের শুনানির সময় আদালত আমার মতামত জানতে চান। তখন আমি আইন দেখিয়ে বললাম, আদালত ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে দিতে পারবেন। যখন এ আইন হয় তখন পিবিআই ছিল না। ওখানে থানার পুলিশকে বুঝানো হয়েছে। যদিও পিবিআই পুলিশের অংশ, তবে তারা একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থা। তাদের কাজ শুধু তদন্ত করা। আর পিবিআইয়ের তফসিলেও ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, ইত্যাদির শাস্তি সংক্রান্ত নারী ও শিশু আইনের ৯ ধারার মামলা দেখার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তারা এটা পারে।
এই রায়ের ফলে এখন থেকে আদালত প্রয়োজন মনে করলে ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোনো ব্যক্তি অথবা পিবিআইয়ের কাছে দায়িত্ব দিতে পারবেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বিয়ের মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার দেবগ্রামের অধিবাসী দেব দুলাল বসুর (৪৫) বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী এক নারী। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ওই শিক্ষার্থীর দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে যে, মিরপুরের একটি ভাড়া বাসায় তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন আসামি। এ ঘটনায় তিনি মিরপুর মডেল থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু পুলিশ মামলাটি গ্রহণ না করে তাকে ফিরিয়ে দেন। পরে ভিকটিম ২০২২ সালের ২৮ জুলাই অভিযোগটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন।
ট্রাইব্যুনাল বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআই অভিযোগের অনুসন্ধান করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ২ জানুয়ারি আসামি দেব দুলালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক জেলা ও দায়রা মাফরোজা পারভীন।
এই অভিযোগ গঠন আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন আসামি। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১(ক) ধারায় করা ওই আবেদন শুনানি শেষে তা খারিজ করে দেন বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদেশে হাইকোর্ট বলেছে, আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মামলাটি বিচারের জন্য আমলে নেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় মামলার বিচার চালিয়ে নিতে ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দেওয়া হলো।
এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন আসামি। আসামির পক্ষের দাবি, পিবিআই পুলিশের একটি সংস্থা। ২০২৩ সালে ‘খোরশেদ আলম বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের মামলার তদন্ত করার অধিকার রাখেন না পিবিআই। কারণ এটা পুলিশের মতো একটি সংস্থা।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, পিবিআই পুলিশের অংশ হলেও তারা একটি পৃথক স্বাধীন তদন্ত সংস্থা। এছাড়া পিবিআই কি কি অপরাধের তদন্ত করতে পারবেন সেটা তাদের তফসিলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই তফসিল অনুযায়ী পিবিআই ৯ ধারার মামলার তদন্ত করতে কোনো আইনগত বাধা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২৪
ইএস/এএটি