ঢাকা, রবিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পেলেন শরীফা, কারাবাসে থাকতে হবে আমৃত্যু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২৪
মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পেলেন শরীফা, কারাবাসে থাকতে হবে আমৃত্যু

ঢাকা: ২৬ বছর আগে রাজধানীর শান্তিনগরে এক নারীকে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই আসামিকে আমৃত্যু করাদাণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

সেই দুই আসামি শরীফা বেগম ও সামাদের আপিল খারিজ করে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগ এই রায় দেন।

একইসঙ্গে কনডেম সেল থেকে শরীফা ও সামাদকে সাধারণ সেলে নেওয়ার নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। সেই সেলে তারা ২৪ বছর ধরে রয়েছেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছিল।

আদালতে শরীফা ও সামাদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।  

গত ১ জুলাই দৈনিক দেশ রূপান্তরে ‘ফাঁসির দিন গুনে এক নারীর ২৪ বছর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি প্রধান বিচারপতির নজরে আসার পর শরীফার আপিল মামলা দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর শরীফা ও সামদের আপিলটি শুনানির কার্যতালিকায় আসে।

তখন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতে বলেন, ‘সম্ভবত দেশের ইতিহাসে এত বছর কোন নারী বন্দির কনডেম সেলে থাকা এটাই একমাত্র ঘটনা। তাই বিষয়টির দ্রুত শুনানির আবেদন করছি। এরপর বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে রায় হয়।

দেশ রূপান্তরের খবরে বলা হয়, ১৯৯৮ সালের ২২ মে শান্তিনগরে একটি ফ্ল্যাটে রুবিনা আক্তার নামে এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় রুবিনার স্বামী মাঈন উদ্দিন আহমেদ ঋতু চাকরি সূত্রে আমেরিকা ছিলেন। তাদের দুই বছর বয়সী মেয়ে মাইসা হত্যাকাণ্ডের সময় অক্ষত থাকে। এ ঘটনায় নিহত রুবিনার বড় ভাই জাফর ইমাম মতিঝিল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা পর্যায়ক্রমে চার আসামি আবদুস সামাদ আজাদ ওরফে সামাদ, শরীফা, মো. এমদাদুল হক এমদাদ ও আবু ইউসুফ নিয়াজী ওরফে আরিফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অভিযোগে বলা হয়, রুবিনার ফ্ল্যাটে গৃহকর্মীর কাজ করতেন শরীফা। একই ভবনের তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে গৃহভৃত্য সামাদের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে শরীফাকে বকাঝকা, ঘটনা প্রকাশ করা ও মারধর করে তাড়িয়ে দেন রুবিনা। আসামি আরিফ ও এমদাদ একই ভবনে দারোয়ান ছিলেন। শরীফার সঙ্গে সামাদের বিয়ে দিতে এবং রুবিনার ওপর প্রতিশোধ নিতে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেন।

বিচার শেষে ২০০০ সালের ৩১ অক্টোবর সামাদ ও শরীফাকে মৃত্যুদণ্ড, এমদাদ ও আরিফকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয় আদালত। রায়ের দিন সামাদ ও শরীফাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ফাঁসির আসামিদের সেলে।

বিচারিক আদালতের রায়ের পর হাইকোর্টে এ মামলার নিষ্পত্তি হয় ২০০৩ সালের ২২ জুলাই। এতে সামাদ ও শরীফার জেল আপিল খারিজ করে দুইজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। এছাড়া আরিফের আপিল খারিজ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখে আদালত। অন্যদিকে বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এমদাদের বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে কিছু বলা হয়নি। এ আসামির বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি।

হাইকোর্টে সাজাপ্রাপ্তদের রায়ের অনুলিপি প্রকাশ হয় ১৩ বছর পর ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই। এক বছর পর ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর সামাদ ও শরীফার পক্ষে আপিল বিভাগে আপিল করা হয়।

রায়ের পর শিশির মনির জানান, এ রায় প্রকাশের পর রিভিউ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০২৪
ইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।