নওগাঁ: নওগাঁর মান্দায় ২৬ বছর আগে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কৃষক আজিমুউদ্দিনকে (৫৫) হত্যা মামলার রায়ে ২৬ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। এছাড়া প্রত্যেকের ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. মোখলেছুর রহমান এ রায় দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভরট্ট শিবনগর গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আজিমুদ্দিন নামে এক কৃষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত আজিমুদ্দিনের ছেলে আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে মান্দা থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলা চলাকালে অভিযুক্ত আটজন আসামি বিভিন্ন সময়ে মারা যাওয়ায় তাদের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ জন আসামির মধ্যে ২২ জনকে আদালতে আনা হয়। চারজন পলাতক। পলাতক সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মান্দা উপজেলার ভরট্ট শিবনগর গ্রামের মনছুর আলী, আলতাব হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, ফজের আলী, ফজলুর রহমান, কাদের আলী, জবেদ আলী, কাজেমুদ্দিন, অহিদুল ইসলাম, আছিব উদ্দিন, মোখলেছার রহমান, কাশেম আলী, লিয়াকত আলী, জালাল, শাহজাহান আলী, ছাইদুর রহমান, পৈক্যা ওরফে বুলু, আজাদ আলী মৃধা, আশরাফুল মৃধা, কলিমুদ্দিন মণ্ডল পটল ওরফে পরশ উল্যা ও গুল মাসুদ।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক চার আসামি হলেন- ভরট্ট শিবনগর গ্রামের এনামুল হক, আনিছুর রহমান, মোখলেছুর রহমান ও মোজাহার আলী।
আদালত ও মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ভরট্ট শিবনগর গ্রামের বাসিন্দা আজিমুদ্দিন গ্রামের মসজিদের নামে থাকা জমি লিজ নিয়ে ভোগ দখল করতেন। সেই জমি নিয়ে আজিমুদ্দিনের সঙ্গে একই গ্রামের বাসিন্দা মনসুর আলী, শাহজাহান আলী ও আলতাব হোসেন মণ্ডলের মধ্যে বিরোধ চলছিল। ১৯৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর সকাল ৬টার দিকে মনসুর আলী, শাহজাহান আলী ও আলতাব হোসেন লোকজন নিয়ে আজিমুদ্দিনের ভোগ দখল করা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে যায়। এ সময় আজিমুদ্দিন তাদের বাধা দিতে এলে মনসুর আলী, শাহজাহান আলী আলতাব হোসেন ও তাদের সহযোগীরা লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার শরীর এবং মাথায় আঘাত করেন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আজিমুদ্দিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন তার মৃত্যু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সামসুর রহমান এবং আসামিপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন আইনজীবী ইউসুফ আলী।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সামসুর রহমান বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে কৃষক আজিমুদ্দিনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় আদালত মামলায় অভিযুক্ত সব আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ২৬ বছর পর ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায়বিচার পেয়েছে। আর এ বিচারের মাধ্যমে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪
এসএম