ঢাকা, বুধবার, ৩ পৌষ ১৪৩১, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া

সংবিধানকে আ. লীগের গঠনতন্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
সংবিধানকে আ. লীগের গঠনতন্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে

ঢাকা: পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত করা কয়েকটি ধারা আদালত বাতিল করেছেন। বাকিগুলো ভবিষ্যৎ সংসদের জন্য রেখে দিয়েছেন।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এ রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানকে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।  

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রায় ঘোষণার পর আইনজীবীরা তাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।

এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা বলেছি, একটি সংবিধানের সংস্করণ প্রক্রিয়া থাকতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংবিধান সংস্করণ হয়। তবে আমাদের দেশের সংবিধানের যতবারই সংস্করণ হয়েছে, এর মধ্যে তৃতীয় সংশোধনী থেকে শুরু করে সব সংশোধনী হয়েছে ব্যক্তিস্বার্থকে কেন্দ্র করে।  

তিনি বলেন, পঞ্চম সংশোধনী ব্যতিক্রম। এই পঞ্চম সংশোধনী শুধুমাত্র জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য করা হয়েছিল। বাকি সব ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধার্থে করা হয়েছিল।

আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, একটি সংবিধান সংশোধন করতে হলে জনগণের মতামত প্রয়োজন আছে। বিগত সরকার সংশোধন করেছে, তাতে জনগণের কোন মতামত নেওয়া হয়নি। জনগণের মতামত তোয়াক্কা না করেই তারা সংবিধান সংশোধন করেছে।  

তিনি বলেন, এই সংশোধনের মাধ্যমে তারা সবচেয়ে বড় যে কাজটি করেছে, তারা আমাদের আদালতকে ব্যবহার করেছে। আদালত হলেন জনগণ ও সংবিধানের অভিভাবক। এই অভিভাবককে যেনতেন ব্যবহার করা যায় না। তারা আদালতের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে জাজমেন্ট নিয়েছে। আর সেই জাজমেন্টের প্রতিফলন হলো এই পঞ্চদশ সংশোধনী।  

আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আদালতের রায়ের পর পঞ্চদশ সংশোধনী আর টিকে থাকতে পারে না। ৯৬ সালের যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল, এই রায়ের পর দেশ আবার সেখানে ফিরেছে। বর্তমানে আদালত যে রায় দিয়েছেন জনগণ তা গ্রহণ করেছে। এই আদেশে জনগণ যেমন খুশি আমরা বিএনপিও একইভাবে খুশি।  

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট ছিল। আমরা এই সংশোধনী বাতিল চাই। এই পলিটিক্যাল কমিটমেন্টের জায়গা থেকে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  

তিনি বলেন, তার (মির্জা ফখরুল) ওকালতনামার মাধ্যমে আমরা এ মামলায় ইন্টারভেনার হই। আমরা রাজনৈতিকভাবে এতদিন বলে আসছিলাম, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানকে আওয়ামী লীগ গঠনতন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। আজ আদালতের রায়ের মাধ্যমে তাই প্রমাণিত। এই সংশোধনী করা হয়েছিল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করার জন্য।  

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আদালত বলেছেন এই সংশোধনীতে জনগণের মতামতের প্রতিফলন হয়নি। অথচ যেখানে বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে জনগণই সব ক্ষমতার অধিকারী হবে। তবে পঞ্চদশ সংশোধনীতে এসব কোনো কিছুই দেখা যায়নি।  

তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় যখন আসবে, তখন আমরা আরও কিছু দেখতে পারব। ৯৬ সালের আগে বেগম খালেদা জিয়া যে সংবিধান রেখে গিয়েছিলেন সে অবস্থা ফিরল। পাশাপাশি যে গণভোট বাতিল করা হয়েছিল, সেটিও আবার ফিরে এসেছে।  

তিনি আরও বলেন, জনগণের কোনো বিষয়ে আপত্তি থাকলে গণভোটে যেতে পারত। কিন্তু শেখ হাসিনা ইচ্ছাকৃতভাবে তার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে গণভোটের মতো এই বিধানকে বাতিল করেছিলেন। আজ তা আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।  

ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সংবিধান হলো একটি লিভিং ডকুমেন্ট, সময় পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধন করা যেতে পারে। আদালত বাতিল করেছেন সংবিধানের ৪৪ এর ২ অনুচ্ছেদ।  

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন সেই ৫৮ অনুচ্ছেদ বাতিল না করে আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, যেহেতু বিগত কয়েকটি নির্বাচনে জনগণের কোনো ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি, তাই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় জনগণের ভোট দেওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়েছিল তাই এটিকে সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার হিসেবে গণ্য করে এটাকে পরিবর্তন করা যাবে না। আদালত বলেছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ৫৮ অনুচ্ছেদ পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে।  

ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, পাশাপাশি জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের যেই বিষয়টি আছে, এটিকে আদালত স্বীকৃতি দিয়েছেন। পাশাপাশি আরেকটি বিষয় হলো, এই যে ৫৪টা সংশোধনী হয়েছিল, তার বাকি সংশোধনীগুলো পরবর্তী সংসদ জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে সে বিষয়ে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে আদালত মন্তব্য করেছেন। তা পরবর্তী পার্লামেন্টের ওপর রেখে দিয়েছেন।  

তিনি বলেন, আমি আদালতকে বলেছি, এই আদেশের বিষয়গুলো সন্নিবেশন করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে সংশোধনীগুলো সন্নিবেশ করে নতুন করে সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করা যেতে পারে। আদালত বলেছেন লিখিত আকারে বিষয়টি জানাতে। আদালত এটি বিবেচনায় নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
ইএসএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।