ঢাকা: গাজীপুরের টঙ্গীতে ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের মধ্যে রেষারেষি বন্ধে পদক্ষেপ এবং গত বছরের মতো দুই পক্ষের আলাদা ইজতেমা বহাল রাখতে সরকারকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আল-কুরআন স্টাডি সেন্টার সুপ্রিম কোর্ট বার শাখার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ-জামান ও অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন এ নোটিশ পাঠান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ডিজি ও ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বিগত বছরের ন্যায় ইজতেমা চালু রাখা, বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার পদক্ষেপ নিতে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া এবং কাকরাইল মসজিদের ভেতরে আবাসিক ব্যবস্থা বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তাবলীগ জামাতের দুটি অংশ জুবায়ের ও সাদপন্থীদের চলমান দ্বন্দ্ব আবারো সংঘাতে রূপ নিয়েছে। টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে চারজন নিহত এবং শতাধিক আহত হন।
২০১৮ সালে উভয়পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত এবং পাঁচ হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন। তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় মার্কাজ ঢাকার কাকরাইল মসজিদের দখল ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি ২০১৭ সাল থেকে প্রতি মাসেই দুবার পালাক্রমে দুই পক্ষের মধ্যে দখল-বেদখল চলছে।
এমনকি টঙ্গীতে তাদের ইজতেমাকে কেন্দ্র করে গত কিছুদিন ধরেই সড়ক অবরোধ, প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়াসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে কাকরাইল মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়েছে। এমনকি পক্ষ-বিপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা মামলা-মোকদ্দমার মাধ্যমে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারের উচিত হবে- এক. তাবলীগ জামাতের মাওলানা সাদপন্থী ও জুবায়ের পন্থীদের দুই পক্ষই বিশ্ব ইজতেমা গতবারের মতো আলাদাভাবে করার লক্ষ্যে দুই পক্ষের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের লিয়াজোঁ কমিটি করতে হবে। কমিটির প্রধান হবেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
দুই. তাবলীগ জামাতের মধ্যে বিবদমান দুই পক্ষ দীর্ঘ সাত বছর ধরে দ্বন্দ্ব চালিয়ে আসছে এবং এক পক্ষ নিজেকে হকপন্থী দাবি করে, অপরপক্ষকে বাতিলপন্থী বলে প্রকাশ করে। বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে পরস্পরের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এতে মসজিদের পবিত্র পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কোনো রকম লিফলেট, পোস্টার ও পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি, এমনকি মসজিদে কারো বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য বন্ধ করার জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিন. তাবলীগ জামাতের বিবদমান দুই পক্ষই কাকরাইল মসজিদের দখল বা নিয়ন্ত্রণ বা আবাসিক হোটেলের ন্যায় যুগযুগ ধরে বসবাস করাকে তারা বিধিবদ্ধ নিয়ম বলে ধরে নিয়েছেন। মসজিদ বসবাসের জায়গা নয়, ইবাদতের স্থান। তাই আবাসস্থল না বানিয়ে মসজিদকে মসজিদের পরিবেশে ফিরিয়ে আনা, এবং সেই লক্ষ্যে মসজিদের স্থায়ীভাবে বিবাদ মিটানোর লক্ষ্যে ঢাকার ডিসির নেতৃত্বে একটি কাকরাইল মসজিদ কমিটি গঠন করে মসজিদের পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া।
এ নিয়ে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ না নিলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
ইএস/আরএইচ