ঢাকা: জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর দায়ে র্যাবের সাবেক ডিজি হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় হেলিকপ্টার থেকে যে গুলি করা হয়েছে, তার প্রমাণ আমাদের তদন্ত সংস্থা পেয়েছে। র্যাবের যে ডিজি ছিলেন হারুন অর রশীদ, তিনি পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ছিলেন। ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতন এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার যে নির্দেশ বা পরিকল্পনা ছিল, তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, র্যাবকে ব্যবহার করে তিনি এত ধরনের অপরাধ করেছিলেন, যার প্রমাণ আমাদের তদন্ত সংস্থা পাচ্ছে। সেই প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য প্রসিকিউশনের কাছে আবেদন করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পিটিশন দিয়েছি। আদালত তাকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন।
২৩ মার্চ আদালত এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন। এর আগে যখনই হারুনকে গ্রেপ্তার করা হবে, তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
তাজুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির অভিযোগ আছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করার যে নির্দেশনা ছিল, সেটি তার দেওয়া। এ ছাড়া র্যাবের মাধ্যমে যেসব অপরাধ হয়েছিল, তা সবই তার নির্দেশনায় করা। তার অধীনস্থ যে কর্মকর্তারা ছিলেন, তাদের মাধ্যমে তিনি এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। এ ধরনের সুশৃঙ্খল বাহিনীর কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি খুবই কঠিনভাবে মেনে চলা হয়। সুতরাং তিনি কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির দায়ে অভিযুক্ত।
তিনি বলেন, এ ধরনের অপরাধ যখন র্যাব কর্মকর্তারা করেছিলেন, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি বা তাদের কোনো শাস্তি দেননি। এই যে পাওয়ার টু প্রিভেন্ট বা পাওয়ার টু পানিশ, সেটিও তিনি ব্যবহার করেননি। উল্টোদিকে তিনি পরিকল্পনা করেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন। এসব অভিযোগই তার বিরুদ্ধে আছে, তদন্ত চলমান আছে। তার অধীনস্ত যে কর্মকর্তারা ছিলেন, তাদেরও আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
তাজুল ইসলাম বলেন, আজ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল থেকে ৯৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর অধিকাংশই পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং কিছু আছে সিভিলিয়ান (বেসামরিক)। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতারা আছেন। আর একমাত্র সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে জিয়াউল আহসান আছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, পাশাপাশি আশুলিয়াতে যে লাশ পোড়ানোর ঘটনা ছিল, সেখানকার দুই আসামি কনস্টেবল মুকুল ও এসআই মালেক, তারা দুইজনই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম। আদালত তাদের একদিন করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। ২৮ জানুয়ারি মুকুলকে ও ৩০ জানুয়ারি মালেককে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৬
ইএসএস/আরএইচ