ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

আইন ও আদালত

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সেই ৪ বিচারককে প্রত্যাহার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সেই ৪ বিচারককে প্রত্যাহার চার বিচারককে প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী

পঞ্চগড়: নিয়োগবাণিজ্য, ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৪ বিচারকের অপসারণের দাবিতে টানা ৭ ঘণ্টা আন্দোলনের পর চার বিচারককে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা এসেছে।  

রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর ২টা থেকে আদালত ঘেরাও এবং মহাসড়ক অবরোধ শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন।

এদিন রাত ৮টায় পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে গিয়ে চার বিচারককে প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান। এরপর কর্মসূচি তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যাহার করে নেওয়া ওই চারজন বিচারক হলেন - পঞ্চগড় আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডল ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুজ্জামান ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু হেনা সিদ্দিকী।  

তারা ৫ আগস্টের পরও আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরের ভূমিকা পালন করে আসছেন বলে অভিযোগ পঞ্চগড় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের।   

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ওই চার বিচারক ঘুষ, দুর্নীতি ও নিয়োগবাণিজ্য করে আসছেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় সমন্বয়কদের দেখে নেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন তারা। তাদের অপসারণের দাবিতে ২২ জানুয়ারি বিক্ষোভ করে ছাত্র-জনতা। ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের অপসারণ না করায় রোববার দুপুর থেকে আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে আদালত ঘেরাও ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। শুরুতেই তারা আদালতের প্রত্যেক ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

এদিকে মহাসড়ক অবরোধ হওয়ায় সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকরা পড়ে। সন্ধ্যায় একটি ফটকের তালা খুলে আদালত চত্বরে প্রবেশ করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। এক পর্যায়ে কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুরও করেন।  

পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু বিচারকদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় তারা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা।

এদিকে দেখা যায় রাত সোয়া সাতটার দিকে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন বিচারকদের অপসারণের বিষয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে কথোপকোথনের কথা জানান।  

পরে রাত আটটায় পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী আদালত চত্বরে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত হতে কিছুটা সময় লাগে। তবে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সিদ্ধান্তটা আইন মন্ত্রণালয়ের সামারি হয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। সিদ্ধান্ত হলো, অভিযোগ ওঠা চার বিচারক সোমবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে পঞ্চগড় আদালতে কোনো বিচারকাজ করবেন না এবং তারা এখান থেকে চলে যাবেন। আর আপনাদের যেসব অভিযোগ রয়েছে, তা লিখিত আকারে আমার কাছে দেবেন। আমি সেগুলো প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠাব। ’

জেলা প্রশাসকের ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা আনন্দ মিছিল করতে করতে আদালত চত্বর ত্যাগ করেন। তবে ভাঙচুরসহ অন্যান্য ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে যেন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তারও দাবি জানান। এ সময় জেলা প্রশাসক তার ওপর আস্থা রাখতে বলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোকাদ্দেসুর রহমান সান বলেন, গত দুই মাস ধরে প্রশাসন আমাদের কোনো কথা শোনেনি। নিয়োগ নিয়ে জেলা জজ আদালতের অনিয়ম অনেকদিন ধরে চলছে। আমরা অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় আমাদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বিচারকরা। পরে চার বিচারককে অপসারণের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসের পর আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছি আমরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, আমরা দুর্নীতিবাজ বিচারকদের অপসারণের জন্য আন্দোলন করেছি। আজকে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, বিচারকদের আর কোথাও বিচারকাজে বসানো হবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি জানার পরে আমরা জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।