দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে ‘ঈদ মোবারক’ লেখার পাশে কুকুরের ছবি ব্যবহার করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
মামলায় ওই পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক ও গ্রাফিক ডিজাইনারকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে মামলার আবেদন করেছি। আদালত আদেশের জন্য ৪ মে দিন ধার্য করেছেন। এখন মামলার আদেশের অপেক্ষায় রয়েছি। প্রত্যাশা করছি, আদালত মামলাটি গ্রহণ করবেন। যারা ইসলাম নিয়ে অবমাননা করে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ’
মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৩০ মার্চ প্রথম আলো পত্রিকার প্রথম পাতার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ কলামের হেডলাইনে ঈদ মোবারক নামের একটি ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশিত হয়েছে, যা কুকুরের ছবিসংবলিত। ওই ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনে ইসলাম ধর্মের পবিত্র উৎসবকে অবমাননা করা হয়েছে। প্রথম আলোর মতো একটি জাতীয় পত্রিকা ইসলাম ধর্মের ঈদের মতো একটি পবিত্র ইবাদতকে কটাক্ষ করতে দ্বিধা করেনি। একটি কুকুরের লোলুপ হাস্যরসাত্মক কার্টুনের সঙ্গে মানুষের আনন্দকে চিত্রায়িত করে ঈদের পবিত্রতা এবং মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় অনুভূতিকে চরমভাবে অবমাননা করা হয়েছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, এই কাজটি একটি সচেতন ও সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঈদুল ফিতরের মতো মহান ধর্মীয় উৎসবকে অপমানিত ও হেয় করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। আসামিরা স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে, ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলাম ধর্মের পবিত্র উৎসবকে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন চিত্রের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর ঈদের মতো পবিত্র ইবাদতকে হেয় প্রতিপন্ন ও অবমাননা করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রথম আলোর কৌতুক ম্যাগাজিন ‘আলপিন’-এর ৪৩১তম সংখ্যায় স্থান পাওয়া একটি কার্টুন নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। প্রকাশিত ওই কার্টুনে একটি পূর্ণবয়স্ক মানুষের সঙ্গে একজন বালকের সংলাপ প্রকাশ করা হয়েছিল, যা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি বিদ্রুপস্বরূপ।
কার্টুনটির সংলাপে যখন বালকটিকে তার নাম জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন সে নামের আগে ‘মুহাম্মদ’ বলেনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সম্মানার্থে তাদের নামের সঙ্গে ‘মুহাম্মদ’ ব্যবহার করে থাকে। কার্টুনের পূর্ণবয়স্ক মানুষটি ছেলেটিকে সব নামের আগে ‘মুহাম্মদ’ শব্দ ব্যবহার করতে বলে। এরপর কার্টুনের সংলাপে যখন ওই লোকটি ছেলেটির হাতে কী জানতে চায় তখন ছেলেটি উত্তর দেয় ‘মুহাম্মদ বিড়াল’; যে সংলাপে সরাসরি ‘নবী’ (সা.)-কে বিদ্রুপ করার অভিযোগ উঠেছিল।
২০০৭ সালের ওই সময় ছিল এক-এগারো শাসনামল। দেশে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ রকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে প্রথম আলোর এ কার্টুন দেশকে আরো অস্থিতিশীল করে তোলে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত এ কার্টুনের তীব্র প্রতিবাদে সারা দেশের মুসল্লিরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎকালীন সরকার ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে। বৈঠকে প্রথম আলোর অনুমোদন বাতিল করার দাবি ওঠে।
পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আলপিনের ৪৩১তম সংখ্যাটির বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর সব কপি বাজেয়াপ্ত করে এবং কার্টুনটির শিল্পী আরিফুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান তার সম্পাদিত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং বায়তুল মোকাররমের তৎকালীন খতিব মাওলানা উবাইদুল হকের হাতে হাত রেখে প্রকাশ্যে ‘তাওবা’ করেন।
কিছুদিন আগেও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে রাজপথে মিছিল করা হয়েছে, পত্রিকাটির অনুমোদন বাতিলের দাবি উঠেছে। এর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভও করেছিল জনতা। তারা প্রথম আলোকে বিশেষ গোষ্ঠীর ‘দালাল’ বলে অভিহিত করে। এর প্রতিবাদে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে জোড়া গরু জবাই কর্মসূচি করেছিলেন বিক্ষোভকারীরা।
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ফটকে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পুড়িয়ে পত্রিকা দুটি বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন একদল শিক্ষার্থী। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংসদ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে পত্রিকা দুটির বিপক্ষে লেখালেখি হয়। কিন্তু এত কিছুর পরও প্রথম আলো এখনো পর্দার আড়ালে কলকাঠি নাড়ছে। ভারতীয় নীতি বাস্তবায়নকারী এ দৈনিক পত্রিকাটি মনে করছে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ