ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

সমুদ্রে সার্বভৌমত্ব

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৭ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৪
সমুদ্রে সার্বভৌমত্ব

পৃথিবীর তিনভাগ জল আর একভাগ স্থল। কিন্তু জলের ওপর নির্ভরতার পরিমাণ আরো বেশি।

আর সমুদ্র হচ্ছে জলের আধার-অসীম সম্পদের ভান্ডার।

বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে সমুদ্রের গুরুত্ব আরো বেশি করে উপলব্ধি হচ্ছে। ফলে সমুদ্রের ব্যবহার ও সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপের প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রয়োজন হয় আইন প্রণয়ন করার।   

১৯৫০ সালের পূর্ব পর্যন্ত সমুদ্র বিষয়ক তেমন কোনো আইন ছিলনা। আর্ন্তজাতিক আইন কমিশন ১৯৫০ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত সমুদ্র সংক্রান্ত আইনের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে কয়েকটি খসড়া বিধান প্রণয়ন করে। বিভিন্ন রাষ্ট্র এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। তার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের কাছে তারা একটি সাধারণ সুপারিশ উপস্থাপন করে।

এসব সুপারিশ নিয়ে আলোচনা ও একটি কনভেনশন গ্রহণের জন্য ১৯৫৮ সালে জেনেভা সম্মেলন হয়। এ সম্মেলনে সমুদ্র আইন সম্পর্কে ৪টি কনভেনশন গৃহীত ও সাক্ষরিত হয়। এগুলো হলো:

-আঞ্চলিক সমুদ্র ও সংলগ্ন অঞ্চল বিষয়ক কনভেনশন, উন্মুক্ত সমুদ্র বিষয়ক কনভেনশন, উন্মুক্ত সমুদ্রে মৎস্য শিকার ও প্রানী-সম্পদ সংরক্ষণ বিষয়ক কনভেনশন ও মহীসোপান বিষয়ক কনভেনশন।

১৯৫৮ সালের সম্মেলনে চারটি কনভেননই গৃহীত হয়। যদিও এগুলোর তাৎপর্য ভিন্ন ভিন্ন। রাষ্ট্রসমূহও এ কনভেনশনগুলো স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করেছে।

৮৫টি রাষ্ট্র জেনেভা সম্মেলনে যোগদান করেছিল। আঞলিক সমুদ্র ও সংলগ্ন অঞ্চল বিষয়ক কনভেনশনটি ১৯৬৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বলবৎ হয় এবং ১৯৭১ সাল নাগাদ ৩৯টি রাষ্ট্র তা অনুসর্মথন বা তাতে যোগদান করে।

উন্মুক্ত সমুদ্রে মৎস্য শিকার ও প্রাণী সম্পদ সংরক্ষণ বিষয়ক কনভেনশনটি ১৯৬৬ সালের ২০ মার্চ বলবৎ হয় এবং ১৯৭১ সাল নাগাদ ৩০টি রাষ্ট্র এর পক্ষভুক্ত হয়।

মহীসোপান সংক্রান্ত কনভেনশনটি ১৯৬৪ সালে ১০ জুন বলবৎ হয় এবং ১৯৭১ সাল নাগাদ প্রায় ৪৪টি রাষ্ট্র এর পক্ষ হয়।

১৯৫৮ সালে জেনেভা কনভেনশনগুলো সমুদ্র বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ আইন ছিল না। এ সম্মেলনে কিছু কিছু বিষয় অমীমাংসিত থেকে যায় যেমন: আঞ্চলিক সমুদ্রের প্রশস্ততা, দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন জলরাশি অতিক্রমণ ও এর উপরস্থ বায়ূমন্ডলে বিমান চালনের অধিকার, আর্ন্তজাতিক নৌপথ হিসেবে ব্যবহৃত প্রণালীতে সকল সময়ে সকল রকম জাহাজ চলাচলের  অধিকার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আঞ্চলিক সমুদ্রে প্রসারতার প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গভীর সমুদ্র প্রথমে সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। পঞদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে কিছু কিছু সময় রাষ্ট্র সমুদ্রের বিস্তীর্ণ অংশের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবী করে। এসব রাষ্ট্রের মধ্যে ছিল পর্তুগাল, স্পেন, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি।

১৭০২ সালে প্রখ্যাত ওলন্দাজ আইনবীদ ব্যেনকারসক তার একটি গ্রন্থে কামানের পাল্লা নীতি প্রচার করেন। অর্থাৎ উপকূল থেকে কামানের গোলা যতদূর যেতে পারে ততদূর পর্যন্ত সমুদ্রের উপর উপকূলীয় রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রসারিত হবে।
এ নীতির ভিত্তিতে উনবিংশ শতাব্দীতে তিন মাইল প্রশস্ত আঞলিক সমুদ্রের নীতি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়।

কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে বহু সংখ্যক রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন ও ঘোষণার মাধ্যমে আঞলিক সমুদের সীমা সম্পর্কে ভিন্নভিন্ন দাবী উত্থাপন করতে থাকে।
 
১৯৩০ সালে হেগে অনুষ্ঠিত আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে আঞ্চলিক সমুদ্রের সীমা সর্বাধিক তিন মাইল নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়।

১৯৫৮ সালে জেনেভা সম্মেলনে সমুদ্রের সীমা তিন মাইল বা ১২ মাইল নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব উত্থাপিত হয়, কিন্তু কোনো প্রস্তাবই প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।

ফলে জেনেভা কনভেনশনে ১২ মাইল প্রশস্ত সংলগ্ন অঞ্চলের বিধান করা হলে আঞ্চলিক সমুদ্রের সীমা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ১৯৬০ সালে অনুষ্ঠিত সমুদ্র আইন সম্পর্কে দ্বিতীয় জেনেভা সম্মেলনেও এ বিষয়ে কোনো  ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

তবে, বর্তমানে সমু্দ্রের সীমা ও ব্যবহার সর্ম্পকে আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত আইন রয়েছে। সেইসাথে এ আইন প্রয়োগ করার জন্য পৃথক আদালতও আছে যা International Tribunal for the Law of the Sea নামে পরিচিত। ১৯৮২ সালে সমুদ্র আইন নিয়ে জাতিসংঘের তৃতীয় সম্মেলনে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৯৪ সালে কনভেনশনটি কার্যকর হয়। বর্তমানে ১৬০টি দেশ এই আইনের আওতাভূক্ত। সমুদ্র আইন সমতা ও সাম্যের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি আইন। আর্ন্তজাতিক আদালতও তার বিচারের এখতিয়ার প্রয়োগ করার সময় এসব নীতি মেনে চলে।

তাই পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই সমুদ্র আইন মেনে চলে। যদিও কিছু কিছু রাষ্ট্র তাদের ক্ষুদ্র প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোর অধিকার খর্ব করার মাধ্যমে প্রচলিত আর্ন্তজাতিক আইন ভঙ্গ করে চলছে। আর্ন্তজাতিক আদালত এসব বিরোধ নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে প্রচলিত রীতি ও বিচারিক এখতিয়ার প্রয়োগ করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধ পরিকর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।