ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

পোশাক কারখানা পরিদর্শন ও সুপারিশ বাস্তবায়ন জরুরি

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৩ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৪
পোশাক কারখানা পরিদর্শন ও সুপারিশ বাস্তবায়ন জরুরি

শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের দেশে আন্দোলন-সংগ্রাম কম   হয়নি। পোশাক কারখানায় কোনো দূর্ঘটনা ঘটার পর এ আন্দোলন আরো বেগবান হয়।

কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্রমিকের ভাগ্যে অধিকারতো পরের কথা, ন্যায়বিচারও জোটেনা।

২০১৩ সালের রানা প্লাজা ট্রাজেডি আমাদের সে কথাই মনে করিয়ে দেয়।

বিদ্যমান শ্রম আইনটি যখন প্রণয়ন করা হয় তখনো পোশাক খাতে শ্রম ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার জন্যই তা করা হয়েছিল। কিন্তু মালিক-শ্রমিক কখনোই এ আইনের কয়েকটি ধারায় একমত্যে পৌছাতে পারেনি।

২০১৩ সালের ২২ জুলাই আইনটি আবার সংশোধন করা হলো। কিন্তু শ্রমিকের অধিকার এখনো ফিরে আসেনি, ফিরে আসেনি শ্রমিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।

শ্রমিক কিংবা মালিকের অধিকতর কল্যাণ অথবা এ লক্ষ্যে আইনের সংশোধনতো পরের কথা, বিদ্যমান আইনেরই বহু বিধানের প্রয়োগ এখনো সুদূর পরাহত।

বিদ্যমান আইনে আছে যে সরকার প্রত্যেক কারখানা পরিদর্শন করবে যাতে করে প্রত্যেকটি কারখানায় ‘কম্প্লায়ান্স’ প্রতিষ্ঠা করা যায়। কিন্তু আইনে থাকলেও বাস্তবে খুব কম সংখ্যক কারাখানাই পরিদর্শন করা হয়।

হিউমান রাইটস ওয়াচ গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের পোশাক কারখানা পরিদর্শনের প্রতিবেদন ও এ সংশ্লিষ্ট একটি পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছে। তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে পোশাক কারখানা পরিদর্শন ভিত্তিক প্রতিবেদন জনগণের কাছে প্রকাশ করার আহ্বান জানানো হয়।

শ্রম আইনের ৩১৯ ধারায় আছে, প্রধান পরিদর্শক বা কোনো উপ-প্রধান পরিদর্শক বা অন্য কোনো পরিদর্শক যেকোনো কারখানায় যেকোনো সময় পরিদর্শন করতে পারবেন। পরিদর্শক কেবল কারখানার অবকাঠামো পরিদর্শন করবেন তাই নয়, তিনি কারখানার যাবতীয় নথি বা কাগজপত্রও পরিদর্শন করতে পারবেন। আইনের কোনো ব্যত্যয় হচ্ছে কী-না তা অনুসন্ধান করার মাধ্যমে আইনের প্রয়োগ ও শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক উন্নয়, পরিবেশ ও এ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করাই পরিদর্শনের উদ্দেশ্য।   

কারখানায় বিদ্যমান শ্রম আইন যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কী-না তা পরিদর্শন করাই এর উদ্দেশ্য। শুধু তাই নয়, অভিযোগের ভিত্তিতে পরিদর্শক আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে অভিযোগ করতে পারবেন।

অর্থাৎ পরিদর্শকের দায়িত্ব কেবল পরিদর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তিনি প্রয়োজনীয় সুপারিশ উপস্থাপন-এমনকি কোনো শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগও দায়ের করতে পারেন।  

কিন্তু বাস্তবে ‘পরিদর্শন’ ধারনাটি পোশাক কারখানায় আজও অনুপস্থিত। তাই হিউমান রাইটস ওয়াচ এখানে পরিদর্শনের ওপর জোড় দিয়েছে।
সংগঠনটি পরিদর্শন প্রতিবেদন বাংলা ও ইংরেজি দু্ভাষাতেই প্রকাশের কথা বলেছে। সংগঠনটির এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন,

‘বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো শ্রমিকের জন্য নিরাপদ ও তাদের অধিকার রক্ষা করতে পারবে না যতদিন না পরিদর্শন প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। ‘

পরিদর্শন প্রতিবেদনের তথ্য জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ, কারখানার যাবতীয় তথ্য জানা একজন শ্রমিকের অধিকার। সে অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পরে।

কারখানায় চাকরিতে যোগ দেয়ার আগে ও পরে তারজন্য এ তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের দেশে একের পর এক দূর্ঘটনা ঘটার পরও আইন মানা হয় না, পরিদর্শন করা হয় না কোনো কারখানা্। সুপারিশের আলোকে পদক্ষেপ নেয়া হয় না কোনো কারখানায়।

রানা প্লাজা র্দূঘটনার পরও এক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতি মানা হচ্ছে না। যদিও সব কারখানার ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য না। কারণ, বেশ কিছু কারখানা আইন মেনে চলছে সেই সাথে তারা শ্রমিকের অধিকার ও মজুরি প্রদান করার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

কিন্তু রানা প্লাজায় আমরা দেখেছি ভবনে ফাটল থাকার পরও শ্রমিকদের কারখানায় যেতে বাধ্য করা হয়েছিল-অর্থাৎ নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে মূল যে বিষয়টি অনুপস্থিত তা হচ্ছে ‘সচেতনতা’।  

রানা প্লাজা দূর্ঘটনার পর বিদেশি ক্রেতারা ৩৫০০ কারখানা পরিদর্শনের ব্যবস্থা করে কারখানাগুলোর অবকাঠামো ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়।

এ ঘটনার পর পরিদর্শন শুরু হলেও চল্লিশ বা তার কম সংখ্যক কারখানার পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় তাও আবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি বলে উল্লেখ করে হিউমান রাইটস ওয়াচ।  

রানা প্লাজা দূর্ঘটনা পর বিদেশি ক্রেতাদের সাথে সরকারের একাধিক সমঝোতা হলেও সে অনুযায়ী সরকার তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে দাবী করে সংগঠনটি।

সমঝোতা অনুযায়ী ১৫০০টি কারখানা পরিদর্শ করে প্রতিবেদন উপস্থাপনার দায়িত্ব রয়েছে। উল্লেখ্য, এই ১৫০০ কারখানার অধিকাংশই আবার সাব-কন্ট্রাক্টিং-এ কাজ করে। এসব কারখানার অনেকগুলোতেই একই ভবনে নানা ধরনের অফিস বা কারখানা রয়েছে।

বর্তমানে আইএলও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বুয়েটের সহযোগীতা নিয়ে প্রায় ২৫০টি কারখানা পরিদর্শনের ব্যবস্থা করেছে।

যদিও সরকার ও আইএলও এ লক্ষ্যে একটি ওয়বসাইট করে সেখানে তথ্য প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তা এখনও কার্যকর হয়নি।

অন্যদিকে উত্তর আমেরিকার ২৬টি ক্রেতা যারা বাংলাদেশের শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন-তারা ৬৮০টি কারখানা পরিদর্শন করেছে। সম্প্রতি তারা ২৮টি কারখানার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এছড়া ১৭৫টি ক্রেতার সমন্বয়ে ১৫৪৫টি কারখানা পরিদর্শনের জন্য একটি গ্রুপ করা হয়। তারা মাত্র ১০টি কারখানার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী এই ১০টির মধ্যেই ১০টি কারখানাই নিরাপত্তা ঝুকিতে আছে।

এরকম একটি পরিস্থিতিতে হিউমান রাইটস ওয়াচের বিষয়ভিত্তিক প্রতিবেদনটি যথেষ্ট গুরুত্ব রাখে। তাই পোশাক খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।