ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

মা যখন শ্রমিক

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৪
মা যখন শ্রমিক

মাতৃত্বকালীন ছুটি একজন নারী শ্রমিকের অধিকার। কর্মক্ষেত্রে নারীর আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকারের নিশ্চয়তা না থাকলে নারীর হাত ধরে বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি একটি শ্লোগানই হয়ে থাকবে।

কিন্তু সে শ্লোগানকে আমরা জয়গানে রূপান্তর করতে চাই।

নারীর এ ন্যায়সঙ্গত দাবী পূরণের জন্য দেশে দেশে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র প্রচলিত ধ্যানধারণার পরিবর্তন ঘটিয়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা সহজ কিছু নয়।

দেশে নারী শিক্ষায় ধারাবাহিক সাফল্য অর্জিত হলেও কর্মক্ষেত্রসহ অন্যান্য সেক্টরে নারী উন্নয়ন তথা নারীর ক্ষমতায়ন এখনো সম্ভব হয়নি। নারী কর্মক্ষেত্রের একটি উল্লেখযোগ্য সেক্টর হলো পোশাকশিল্প। এই খাতে শ্রমিকের প্রায় ৮০ শতাংশই নারী।

মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে পোশাক শিল্প থেকে। এ প্রেক্ষাপটটি বিবেচনায় নিয়ে কর্মক্ষেত্রে বিশেষ করে পোশাক খাতে নারী শ্রমিকদের গুরুত্ব সহজেই উপলব্ধি করা যায়।

নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক উন্নয়ন কোনোটিই সম্ভব না নারীর শ্রমের মর্যাদা না দিয়ে। কর্মক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন করতে হলে এক্ষেত্রে তার অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

এমনিতে পোশাক খাতে শ্রমিকের বেতন খুব সন্তোসজনক নয়, তারপর ও একটার পর একটা সংঘর্ষ-বিক্ষোভ তো লেগেই আছে।

একথা সত্যি যে, পোশাক খাতের উন্নয়নের জন্য দেশের তৃণমূল পর্যায়ের নারীরা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়েছে। কিন্তু স্বল্পতম মজুরিতে কাজ করা এ শ্রমিকদের কর্মকেক্ষেত্রে অধিকারের বিষয়টি এখনো যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। ফলে কিছুটা অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হলেও অধিকারের স্বীকৃতি মিলেনি। এ খাতে শ্রমিকেরা অনেক বেশি নিগ্রহ, বঞ্চনা আর বৈষম্যের শিকার হন। নিজেদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে তাদের অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়। নারীর জন্য এ পথ আরো বন্ধুর।

নারী শ্রমিকের অধিকারের বিষয়টি শ্রম আইনের চতুর্থ অধ্যায়ে আছে। প্রসূতি কল্যাণ সুবিধার অধীনে তাদের কয়েকটি সুযোগ বা অধিকারের কথা বলা আছে। আন্তর্জাতিক আইনের আলোকেই আমাদের রাষ্ট্রীয় আইনের এ বিধানগুলো প্রণীত হয়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক আইনে নারী শ্রমিকের অধিকারগুলো আরো বিস্তৃত।

৪৫ ধারা অনুযায়ী কোনো মালিক তার প্রতিষ্ঠানে কোনো নারী শ্রমিককে সন্তান প্রসবের পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে কোনো কাজ করাতে পারবেন না৷ সন্তান প্রসবের কমপক্ষে দুই মাস বা আট সপ্তাহের ছুটির বিষয়টি আইনে বলা আছে। এটি বাধ্যতামূলক। তবে এটি নিশ্চিত করা কেবল মালিকের একার দায়িত্ব নয়, নারী শ্রমিকের ওপরও একইভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

যেকোনো কাজে নিয়োগের আগে শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। আর এক্ষেত্রে নারী শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও সক্ষমতার দিকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আইনেও এ বিষয়টির নিশ্চয়তা আছে। নারীর জন্য স্বাস্থ্যহানীকর কোনো কাজ দেওয়া যাবে না, এটা আইনের বিধান।

একজন নারী শ্রমিক সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের আগে আট সপ্তাহ এবং পরের আট সপ্তাহের জন্য প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাবেন।

তবে, ৪৬(২) ধারা অনুযায়ী কোনো নারী শ্রমিক এ সুবিধা পাবেন না যদি তার সন্তান প্রসবের সময় দুই বা ততোধিক সন্তান বেঁচে থাকে। তবে এক্ষেত্রে যদি তার কোনো ছুটি পাওনা থাকে তবে তিনি এই সুবিধা পাবেন। তবে, এই বিধানটির রাষ্ট্রভেদে ভিন্নতা আছে। দেশের জনসংখ্যা বিচার করেই এ বিধান করা হয়েছে।

এ আইনের ৪৭ ধারায় এ বিশেষ সুবিধাগুলো পাওয়ার পদ্ধতিগুলো কেমন হবে তা বলা আছে ও ৪৮ ধারায় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধার পরিমাণ সম্পর্কে বলা আছে।

ভারতে নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বা অন্যান্য সুযোগ  সুবিধাগুলো মাতৃত্বকালীন সুবিধা আইন ১৯৬১ সালে অন্তর্ভুক্ত। আমাদের দেশেও এ আইনটি ছিল। তবে ২০০৬ সালের পর নতুন করে অন্যান্য আইগুলোকে শ্রম আইনে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনকে ২০০৬ সালের আইনে একিভূত করা হয়েছে।

ভারতের আইনানুযায়ী মাতৃত্বকালীন ছুটির দশ সপ্তাহ আগে কর্মক্ষেত্রে ভারী কাজ থেকে বিরত থাকার বিধান আছে। এক্ষেত্রে মালিককে দশ সপ্তাহ আগে বিষয়টি জানাতে হবে। সন্তান প্রসবের অন্তত ৭ সপ্তাহ আগে ছুটির বিষয়টি মালিককে অবহিত করতে হবে।

কাজেই, বর্তমান আইনে নারীর মাতৃত্বকালীন ছুটি ও সুবিধার বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একজন নারী শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও সক্ষমতার বিষয়টি আইনে বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটি হলো বাস্তবায়নের। যেকোনো আইন বাস্তবায়ন না হলে তার কোনো মূল্য নেই। তবে, আইনের এ বাস্তবায়নের ঘাটতির জন্য কেবল একা মালিককে দায়ী করা যায়না। শ্রমিকরা তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন না হওয়াও এর বড় কারণ। মালিক-শ্রমিক অধিকার ও শ্রমপরিবেশ- পুরো বিষয়টি অবিচ্ছিন্ন। সংশ্লিষ্ট সবাইকেই আইনানুযায়ী নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।