ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

টাকা পাঠানোর আগে ভাবুন

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৪
টাকা পাঠানোর আগে ভাবুন

কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছে। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন বা অর্থ স্থানান্তর করেননি এমন কাউকে পাওয়া কঠিন।

দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করলেও এ বিষয়ে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ দেখা যায় না।

প্রচলিত আইনে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো শুধু পণ্যই পরিবহন করতে পারে। এর বাইরে অর্থ লেনদেনের কোনো এখতিয়ার নেই। কিন্তু পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি অধিকাংশ সার্ভিসগুলোই অর্থ আদান প্রদান করে থাকে। তাদের ব্যবাসার একটি বড় অংশ জুড়ে আছে অর্থ স্থানান্তর সংক্রান্ত ব্যবসা। সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে পুরো দেশব্যাপী অর্থ স্থানান্তরের এ ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায় এসব কোম্পানি বিভিন্ন মাদক, বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্রসহ নানা ধরনের অবৈধ পণ্যও বহন করে থাকে। এসব অবৈধ ব্যবসার সাথে তারা যে সব সময় জড়িত সেরকম নয়। তাদের অজ্ঞাতেও  বৈধ ও অবৈধ পণ্য পরিবহন হয়ে থাকে। কোম্পানিগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার্টন বা প্যাকেটে কি আছে তা পরীক্ষা করে না। অর্থের বিনিময়ে কোম্পানিগুলো পণ্য গ্রহণ করে ও গন্তব্যে পৌছে দেয়। ওজন বা আকৃতি অনুযায়ী টাকা বা মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে কিনা  সেটাই বিবেচনা করা হয়। কি পাঠানো হচ্ছে তা অনেক সময় পরীক্ষা করা হয় না।

উল্লেখ্য, প্রায় তিন দশক ধরে এ ব্যবসা চললেও এক্ষেত্রে কোনো নিয়মকানুনের বালাই নেই। এভাবে অর্থ স্থানান্তর করার জন্য কোনো আইন নেই। আইন ছাড়াই চলছে দেশের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় টাকা পয়সা আনা নেওয়ার কাজ।

বৈধ বা আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থস্থানান্তরের জন্য আমাদের আইন আছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন ও ডাকঘর আইনের মাধ্যমে অর্থ ও পণ্য পরিবহন ও স্থানান্তর করা হয়। অর্থ স্থানান্তরের জন্য একসময় ব্যাংকই ছিল একমাত্র ভরসা। সে সময় অনলাইন ব্যাংকিংও ছিল না। ফলে এভাবে অর্থ স্থানান্তর সময় সাপেক্ষও ছিল।
এছাড়া ডাকঘরও অর্থ ও পণ্য স্থানান্তরের আরেকটি মাধ্যম ছিল।

পরবর্তীকালে, সময়ের চাহিদা মেটাতেই অর্থ ও পণ্য স্থানান্তরের জন্য কুরিয়ার সার্ভিসের আগমন। আর এখনতো অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে  কুরিয়ার সার্ভিস।

বর্তমানে অর্থ স্থানান্তরে যোগাযোগ প্রযুক্রির ব্যবহার জনিপ্রয় হওয়ায়  মোবাইল ব্যাংকিং, বিকাশ ইত্যাদি আরো নানা সার্ভিস যোগ হয়েছে।

সন্দেহ নেই, অর্থ সঞ্চয় ও স্থানান্তরে বিশ্বব্যাপী ব্যাংকই জনপ্রিয় ও আস্থাভাজন স্থান। কিন্তু সময়ের চাহিদা মেটাতে না পারলে বিকল্প পদ্ধতিতে অর্থ স্থানান্তরের প্রশ্ন আসে। এ প্রেক্ষাপটে আমাদের ব্যাংকগুলোও ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগ করায় সে চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে। বর্তমানে অনলাইন ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়েছে। ব্যাংকের সেই ম্যানুয়াল পদ্ধতি এখন আর অনুসরণ করা হয় না। ভবিষ্যতে এসব পদ্ধতি আরো সহজ ও জটিলতামু্‌ক্ত হবে।

তবে, অনলাইন ব্যাংকিং বা অন্যান্য প্রযুক্তি নির্ভর পদ্ধতি চালু হওয়ার আগেই এদেশে কুরিয়ার সার্ভিস চালু হয়েছে। ফলে পণ্য স্থানান্তরেতো বটেই, অর্থ স্থানান্তরেও এটি এখনো জনপ্রিয় মাধ্যম। যদিও তা আরো আধুনিক পদ্ধতির আবির্ভাবের ফলে এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা অনেকটাই হোচট খেয়েছ।

যাই হোক, এসব কোম্পানিগুলো বৈধভাবে পণ্য পরিবহন করলেও অর্থ স্থানান্তর করছে অবৈধভাবে। কারণ, অর্থ স্থানান্তরের কোনো লাইসেন্সই নেই এসব কোম্পানিগুলোর।  

আমাদের বিদ্যমান মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালায়ও এসব কোম্পানির অর্থ স্থানান্তরের এখতিয়ার নেই। এখতিয়ার বহির্ভূতভাবেই চলছে এসব অর্থ স্থানান্তর।  

দেশে কয়টি কুরিয়ার কোম্পানি আছে তার সঠিক হিসাবও হয়তো নেই। পুরো দেশব্যাপী ব্যবসা করছে অল্প কয়েকটি কোম্পানি। কিন্তু স্থানীয়ভাবে ব্যবাসা করছে অনেক কোম্পানি। আবার কোনো কোনো কোম্পানি আঞ্চলিক পর্যায়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। অনেকে আবার বিদেশেও ব্যবসা বিস্তৃত করেছে।

অন্যদিকে গনমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী যারা বিদেশে ব্যবসার পরিধি বিস্তার করছেন তাদের কেউ কেউ মানি লন্ডারিং ও হুন্ডি ব্যবসার সাথেও জড়িত। তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য।  

আইনানুযায়ী কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানির জন্য বর্তমানে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু সবাই লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এসব দেখভাল করার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ আছে।

যেহেতু অর্থ স্থানান্তরের কোনো আইনি ভিত্তি নেই, তাই এক্ষেত্রে জবাবদিহিতাও নেই। অর্থ যদি আপনার গন্তব্যে না পৌছায় তবে আপনার অভিযোগ করার কোনো জায়গা থাকবে না। কারণ, এভাবে অর্থ স্থানান্তরের কোনো আইনগত ভিত্তিই নেই। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তি করার কোনো জায়গা নেই।

ব্যাংক বা ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঠানো মানি অর্ডার যদি হারিয়ে যায় তবে তা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। জবাবদিহিতার জায়গা আছে। কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে টাকা হারিয়ে গেলে তার প্রতিকার আশা করা যায় না। অন্তত: আইনগত ভিত্তি না। এভাবে অর্থ স্থানান্তর করার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।