ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

শত কোটি জনের অপার স্বপ্ন, একটি বিশ্ব, করি না নিঃস্ব

এরশাদুল আলম প্রিন্স | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২০ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৫
শত কোটি জনের অপার স্বপ্ন, একটি বিশ্ব, করি না নিঃস্ব

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী নানা জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়।



দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য শত কোটি জনের অপার স্বপ্ন, একটি বিশ্ব, করি না নিঃস্ব।
 
পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলাবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সমগ্র বিশ্বের জনগণকে একই মঞ্চে উপস্থিত হয়ে এ বিশ্বকে বর্তমান ও আগামী প্রজেন্মর জন্য একটি নিরাপদ আবাসভূমি হিসেবে গড়ে তোলার অপার স্বপ্নই এবারের প্রতিপাদ্য।
 
এ মহাজগতে মানুষের বসবাসের জন্য শুধু একটি ভূখণ্ডই আছে। পৃথিবী নামক এ গ্রহে মানুষকে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও নানা প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই বাঁচতে হয়। সভ্যতার গোড়া থেকে আজ অবধি মানুষ তার অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তনের যে সংগ্রাম করেছে আজকের বিশ্ব তারই একটি ঐতিহাসিক পরিণতি-উন্নয়ন কার্যকমের ফসল।  
 
অর্থাৎ বেঁচে থাকতে হলে উন্নয়নে শরিক হতেই হবে। কিন্তু সে উন্নয়ন যদি মানুষের ধ্বংসের কারণ হয় তবে তা নিয়ন্ত্রণ করাও মানুষের দায়িত্ব। আজকের বৈশ্বিক পরিবেশ আন্দোলনের রয়েছে এমনই একটি প্রেক্ষাপট যেখানে উন্নত দেশগুলো আরো বেশি উন্নয়নের জন্য উদ্বুদ্ধ আর তারই খেসারত দিতে হচ্ছে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল বিশ্বকে। কিন্তু কোনো বিশ্বই এর দায় স্বীকার করতে নারাজ।
 
কার্বনের মাত্রা নির্ধারণে এখনো একটি আন্তর্জাতিক দলিল আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। আন্তর্জাতিক এ দরকষাকষিতে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু তহবিল সংগ্রহের জন্য যতটা ব্যতিব্যস্ত জলবায়ু ও পরিবেশ সংরক্ষণে জাতীয়ভাবে ততটা সোচ্চার নয়।  
 
সে কারণেই প্রয়োজন পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা। আর জনসচেতনতা ছাড়া তা সম্ভব না।
 
বিশ্বনেতৃবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব স্বীকার করে নিয়ে এর ভয়াবহতা রোধ করার তাগিদ থেকেই পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। উন্নয়নের আবশ্যিক কর্মযজ্ঞ হচ্ছে উৎপাদন। এ উৎপাদনে শক্তির যে ব্যবহার ও রূপান্তর হয় তা আমাদের পরিবেশের ওপর এক ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলে। উন্নয়নকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য টেকসই উন্নয়ন। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে যে উন্নয়ন তা-ই টেকসই উন্নয়ন।

উন্নয়নের সঙ্গে উষ্ণতার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। এটি একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা। উন্নত রাষ্ট্রগুলোই কার্বন নির্গমনের জন্য প্রধানত দায়ী। বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের সবচেয়ে বড় অংশীদার তারাই। চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল, ফ্রান্স ও ইউরোপের দেশগুলোর কার্বন নির্গমনের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্গমনের এ মাত্রা একইভাবে বৃদ্ধি পেলে বর্তমান প্রজন্মকেই তার খেসারত দিতে হবে। এদিকে উন্নত বিমশ্বের জলবায়ু অনাচারের ফল ভোগ করতে হচ্চে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নেতিবাচক প্রভাব আমরা এড়িয়ে চলতে পারবো না। কিন্তু এর মাত্রাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ আন্দোলনের মূল কথাই হলো পরিবেশ ও উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা। যাতে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম তথা বিশ্ব টিকে থাকে।  

ইতোমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সমগ্র বিশ্বে। আর বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো আছে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে।

বাংলাদেশ প্রত্যক্ষভাবে এর প্রভাব পেতে শুরু করেছে। অনাবৃষ্টি, খড়া, মরুকরণ এখন বাংলাশের স্বাভাবিক চিত্র। আর জীববৈচিত্র্য তো অনেক আগে থেকেই হুমকির মধ্যে রয়েছে।

কিন্তু এ সংকটেরও সমাধান মানুষের হাতেই রয়েছে। কার্বন নির্গমন হ্রাস, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ, খাদ্যাভাস পরিবর্তন, বনায়ন, প্রাকৃতিক পরিবেশকে যথাসম্ভব অক্ষত রাখা ও বন উজাড় বন্ধ করা। এছাড়া রূপান্তর যোগ্য জ্বালানি ও শক্তি ব্যবহার এ সংকটের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে।

এ পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা মানুষেরই জন্য। কিন্তু মানুষকে সে সম্পদ ব্যবহার করতে হবে ন্যায়সঙ্গতভাবে। তা না হলে পরিবেশগত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। শতকোটি জনের এ বিশ্বে বেঁচে থাকা সবারই অপার স্বপ্ন। সে স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের জন্য বৈশ্বিক সম্পদের ন্যায়নিষ্ঠ ব্যবহার জরুরি। এ সম্পদ নিঃশেষ হয়ে গেলে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষাও কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০৯ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।