ভিক্ষাবৃত্তি বর্তমানে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান ভিক্ষাবৃত্তি সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের লক্ষণ।
ভিক্ষা করা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ না করলেও যারা ভিক্ষা করে তাদের কাছে এটি পেশাই। অনেকেই এটি স্থায়ী বা অস্থায়ী পেশা হিসেবে গ্রহণ করছে। ঢাকা শহরে বিশেষ করে রমজান মাসে ভিক্ষাবৃত্তির বিস্তার দেখে তাই মনে হয়।
এটি কোনো পেশা নয়, অপরাধ। তবে, যেভাবেই বলিনা কেন, ভিক্ষাবৃত্তির পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ কারণ নি:সন্দেহে নিদারুণ দারিদ্র। দরিদ্র, সহায়সম্বলহীন, অসহায় ও বৃদ্ধরাই দারিদ্রের কাছে পরাজয় বরণ করে ভিক্ষার মতো কাজকে বেছে নিতে বাধ্য হন। নিতান্ত বাধ্য না হয়ে কেউ ভিক্ষার পথে পা বাড়ায় না। ফলে, দারিদ্র দূর করা তথা দারিদ্র সীমার নীচে বাস করা লোকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সবার জন্য কর্মসংস্থান বিশেষ করে অসহায় ও বৃদ্ধদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র বেচে থাকার জন্য ন্যূনতম ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, আজ যারা বয়:বৃদ্ধ-রাষ্ট্র যাদেরকে বোঝা মনে করছে, একসময় তারাই এ রাষ্ট্রের হাল ধরেছে, অবদান রেখেছে রাষ্ট্রগঠন ও উন্নয়নে। একসময় তারা রাষ্ট্রের বোঝা ছিলনা, পরিবারের তো নয়ই। তাই রাষ্ট্র ও পরিবারে জন্য এটি নৈতিক দায়িত্ব।
আর্থ-সামাজিক কারণেই ভিক্ষাবৃত্তিতে ঝুকে পড়ছে একটি শ্রেণি। কেবল ঢাকা নয়, পুরো দেশেই বেড়ে যাচ্ছে ভিক্ষুকের সংখ্যা। ঢাকার অলিতে-গলিতে কিংবা রাজপথে কয়েক কদম হাটলেই দেখা মিলবে ভিক্ষুকের। নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের ভিক্ষুককে দেখা যাবে। আর রমজান মাসেতো কথাই নেই। ঢাকা শহর যেনো ভিক্ষুকের নগরীতে পরিণত হয়।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, রমজান মাসে ঢাকার আশপাশ জেলা বা অন্য জেলাগুলো থেকে প্রচুর ভিক্ষুক জমা হয় রাজধানীতে। এদের মধ্যে অনেকে হয়তো সাময়িক বা বছরের এসময়টাতেই ভিক্ষা করে। নির্দিষ্ট সময় পরে আবার বাড়ি ফিরে যায়।
এসব ভিক্ষুকদের মধ্যে অনেকেই আছে বিকলাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী। আবার নারী ও শিশুদের সংখ্যা ও অনেক। শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করা এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ভিক্ষুকদের অধিকাংশই হচ্ছে নারী ও শিশু।
বছর পাচেক আছে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেছিল। সেই রুলের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রাজধানীসহ সারা দেশে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি রাজধানীতে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবকে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে ডিএমপি অধ্যাদেশ অনুসারে শিশু ভিক্ষাবৃত্তিসহ সকল প্রকার ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ। এই অধ্যাদেশটি কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের একটি আদেশও বিদ্যমান।
বিভিন্ন মহানগরী ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য আইন বা বিধি প্রণয়ন করেছে। বরিশাল মহানগরী পুলিশ আইন ২০০৯-এর ৮৪ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বাস্তায় বা সর্বসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে ভিক্ষা করলে অথবা অন্য কোনো উপায়ে( ঘা, জখম, অসুস্থতা বা বিকলাঙ্গ প্রদর্শন করা) দয়ার উদ্রেগ করে ভিক্ষা করলে তিনি এক মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য রাষ্ট্র ও প্রশাসনকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কার্যকরা উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশকে ভিক্ষাবৃত্তি মুক্ত করা সম্ভব। ভিক্ষাবৃত্তি মানবতার জন্য অপমান। আত্নসন্মান ও আত্নমর্যাদাবোধের অভাব থাকলেই ভিক্ষাবৃত্তিতে মানুষ নিয়োজিত হয়। সেই সাথে দারিদ্রতো আছেই। ভিক্ষুকদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র ও যথাযথ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারলে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে হতে হবে মানবিক ও প্রশাসনকে আইন প্রয়োগের ব্যাপারে হতে হবে কঠোর।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৫