ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

শিশু নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক

ল’ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৫
শিশু নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক ফাইল ফটো

শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার রায়ের জন্য আগামী ৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেছে আদালত। গত ৮ জুলাই শিশু রাজনকে ভ্যান চুরির অভিযোগে খুটির সঙ্গে বেধে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও গণমাধ্যমে ঘটনাটি প্রচার হলে সর্বস্তরের মানুষ এর প্রতিবাদ করে। ২২ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন ও ১ অক্টোবর এ মামলার সাক্ষগ্রহণ শুরু হয়।

শুধু রাজনই নয়, এরকম হত্যাকাণ্ড এর পর আরো হয়েছে। আমরা আশাবাদী যে রাজন হত্যার মামলাটি অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হচ্ছে। পাশাপাশি শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে চলমান বাকি মামলাগুলোও গুরুত্বের সাথে পরিচালিত হবে। শিশুদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেই হবে।

গণমাধ্যমে চোখ রাখলে এরকম শিশু নির্যাতনের ঘটনা আমাদের প্রায়ই চোখে পড়ে। বর্বরোচিত ও পাশবিক কায়দার নির্যাতনের শিকার হয় কোনো না কোনো শিশু। প্রতিকারহীন এসব শিশু নির্যাতনের কারণে দিন দিন  বেড়েই যাচ্ছে শিশু নির্যাতন।

সিলেটের রাজনের পর খুলনায়ও আমরা একই কায়দার শিশু নির্যাতনের চিত্র দেখেছি। এভাবে একের পর এক শিশু নির্যাতন আমাদের চরম সামাজিক অবক্ষযের চিত্রকেই তুলে ধরে।  

শিশুদের প্রতি আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন  অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের মানবিক মূল্যবোধের দৃস্টিতে দেখাতো দূরের কথা দরিদ্র ও পথশিশুদের প্রতি সর্বনিম্ন সহনশীলতার দৃষ্টিভঙ্গিও আমরা পোষণ করিনা। লালন করিনা কোনো রকম মানবিকতা। ফলে, এ শিশুরা বেড়ে উঠছে এক চরম অবেহেলা আর সামাজিক নিষ্পেষণের ভেতরে।

রাষ্ট্রীয়ভাবে শিশুশ্রম নিরসন, তাদের জন্য আয়ের সুযোগ সৃস্টি, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও দারিদ্রের হাত থেকে তাদের বের করে আনার জন্য কোনো উদ্যোগ নেই। উল্লেখযোগ্য কোনো সামাসিক উদ্যোগও নেই।

শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমাদের কার্যকর কোনো কার্যক্রম নেই। একটি পথশিশুদেরও যে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সুযোগ লাভের অধিকার আছে তা হয়তো আমরা ভুলতে বসেছি। রাষ্ট্রের কাছে সব শিশুই সমান। সমাজের কাছেতো বটেই। শিশুরা কখনো ধনি গরিব হয়না। সব শিশুই সমান। কিন্তু আমাদের বিদ্যমান সব ধরনের সামাজিক অসঙ্গতির প্রভাব থেকে শিশুরা মুক্ত নয়।

এক কথায় আমরা শিশুদের জন্য একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারিনি। রাষ্ট্রের একার পক্ষে এ কাজ সম্ভব নয়। তাই সমাজ তথা নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।

একটি দরিদ্র পরিবারের জন্য সম্ভব নয় তার শিশুকে সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশ প্রদান করা। তাই রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হয়, এগিয়ে আসতে হয় মানুষকে। দেশের অনেক শিশু না খেয়েই রাত কাটিয়ে দেয়। এ বাস্তবতা সমাজের প্রত্যেকটি মানুষকে মনে রাখতে হবে।

বাধ্য হয়েই অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানদের কাজে নিয়োগ করেন। তারা কলকারখায়, দোকানো, হোটেলে বা রাস্তায় কাজ, ভিক্ষা করে। কিন্তু আমরা এসব শিশুদের সাথে কি মানবিক আচরণ করি?

অথবা যে শিশু কল কারখানায় কাজ করে তার জন্য কি শিশু উপযোগী নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পেরেছি? এরকম আরো অনেক বিষয় আছে যা শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যতের পথে অন্তরায়।

আমাদের দেশে শিশু নির্যাতন বিরোধী আইন আছে, আছে আদালত। কিন্তু আইনের প্রয়োগ না থাকলে কোনো সমাজেই তার প্রতিফলন দেখা যায় না। ২০০৩ সালের সংশোধীত আইনটির কঠোর প্রয়োগ হলে শিশু নির্যাতন হ্রাস পাবে। আইনের কাজ হলো সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ হলে আর কোনো রাজনকে এরকম নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যু বরণ করতে হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।