ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

খাদ্য নিরাপত্তা ও জীববৈচিত্র্য

ল’ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৬
খাদ্য নিরাপত্তা ও জীববৈচিত্র্য

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলো সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। দারিদ্র্য ও অধিক জনংখ্যার কারণে মারাত্নক খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে এ দেশগুলো।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইতিমধ্যেই আমাদের খাদ্য উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।  

শুধু বাংলাদেশই নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই ক্রমাণ্বয়ে খাদ্য ঘাটতি বাড়ছে। যদিও কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে খাদ্য উৎপাদনে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন পুরোপুরি রোধ করা যায়না। তবে, লাগসই প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহারের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা কিছুটা নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু দীঘ মেয়াদে খাদ্য ঘাটতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। সেকারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।  

একদিকে বাড়ছে জনসংখ্যা, অন্যদিকে কমছে আবাদি জমি। সব মিলিয়ে দুভাবেই হুমকির মধ্যে পড়ছে  দেশের খাদ্য নিরপত্তা। ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক কারণে বাংলাদেশ অধিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ।  

তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খড়া ইত্যাদির কারণে শুধু কৃষিই নয়, মানুষের চিরচেনা স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহই আজ ব্যহত।

কৃষির পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যের অবক্ষয়ও একটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ুর সাথে জীববৈচিত্র্যের রয়েছে অস্তিত্বের সম্পর্ক। ক্রমবর্ধমান খাদ্য ঘাটতি শুধু মানুষের জন্যই হুমকি নয়, এটি অন্যান্য প্রাণীর জন্যও একটি বাস্তবতা। অনেক প্রাণীই আজ সংকটাপন্ন। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব, অন্যদিকে জীবের বিচরণক্ষেত্রে দস্যুদের আনাগোনা-অবাধ বিচরণ-এসব কর্মকাণ্ডে বিলীন হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
 
এসব মোকাবেলায় অান্তর্জাতিক আইন আছে। আছে জাতীয় আইনও। কিন্তু আইন ও রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে চলছে প্রাণী নিধন।   পরিবেশ ও জলবায়ুর ক্ষতি সাধন করে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ।

১৯৯২ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত জীববৈচিত্র্য সনদের অধিকাংশ নীতি আজ অনুসরণ করা হচ্ছে না। বাংলাদেশে বণ্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন আছে। ২০১২ সালের এ আইনটির তেমন কোনো প্রয়োগ আমারা দেখিনা। গণমাধ্যমে হাতি ও বিভিন্ন প্রজাতির বাঘ মেরে ফেলার ঘটনা আমরা প্রায়ই দেখি। খাদ্যের অভাবে এসব বণ্যপ্রাণী অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে। কিন্তু আমরা স্বাভাবিক আমাদের স্বাভাবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ না করে এগুলোকে মেরে ফেলি। শুধু তাই নয়, বাঘ, হরিণ, কুমিরের চামড়া পাচার এখন প্রতিদিনের ঘটনা। এর পেছনের রয়েছে একটি চক্র। আইন আছে, কিন্তু এই অপরাধের সাথে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা দেখিনা।

১৯৭১ সালে রামসার সনদ, বিশ্ব হেরিটেজ সনদসহ আরো অন্যান্য সনদে আমরা সাক্ষর করেছি। প্রত্যেকটি সনদেই আমরা জীববৈচিত্র্য ও জলাশয়, জলাধার, বনসম্পদ রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কিন্তু প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নাই।

১৯৯৫ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৭ সালের পরিবেশ রক্ষার বিধান করা হয়। শুধু তাই নয়, আমাদের সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের কথা বলা আছে। তাই শুধু আইনগতই নয়, বর্তমানে পরিবেশ সংরক্ষণ করা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্বও বটে। সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধনীতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র বিষয়টি সংযুক্ত করা হয়। এতে, বলা হয়, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য পরিবশের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও   নিরাপত্তা বিধান করিবেন’।  

তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আইনগত ও সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।