ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

সাংবাদিক মন্টুর পরিবার

যেভাবে পাবেন ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ

ইলিয়াস সরকার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৬
যেভাবে পাবেন ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ

ঢাকা: ২৬ বছর আগে পেপসি কোলার গাড়ি চাপায় নিহত হন দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মন্টু। এরপর এ ঘটনায় তার স্ত্রী রওশন আখতারের করা ক্ষতিপূরণ মামলা চলেছে বছরের পর।

শুধু বিচারিক আদালতেই মামলা চলেছিলো ১৫ বছর।

এরপর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নিষ্পত্তি হতে লেগেছে ৫ বছর। আর বাকি সময়গুলো লেগেছে আপিল বিভাগে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে জুলাইতে শেষ হয়েই হলো না চূড়ান্ত নিষ্পত্তি। আপিল বিভাগ রায় ঘোষণার প্রায় দেড় বছর পরে এসে আবার পুনঃশুনানি। অবশেষে সেই কাঙ্খিত রায়। ক্ষতিপূরণের রায়।

রায়ে নিহত সাংবাদিক মণ্টুর পরিবারকে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।  

কিন্তু এ টাকা কিভাবে পাবে মন্টুর পরিবার?- এমন প্রশ্ন ছিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুচ আলীর কাছে। যিনি নিজেই সম্প্রতি আপিল বিভাগের এক রায়ে ১৪ লাখ ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ২০১২-২০১৩ সেশনে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আমার মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিলো। ওই সেশনের প্রশ্নপত্রে ৩৮টি ভুল ছিলো। ভুল প্রশ্নের বৈধতা নিয়ে ওই সময়ে হাইকোর্টে রিট করি। প্রশ্নপত্রে ভুল না হলে আমার মেয়ে পরীক্ষায় পাস করতো। গত বছরের ৫ মার্চ প্রশ্নপত্রে ৭টি ভুল চিহ্নিত করে হাইকোর্ট আমার মেয়েকে একটি সরকারি মেডিকেলে ভর্তির নির্দেশ এবং বেসরকারি মেডিকেলে আমার মেয়েকে ভর্তি করতে যে টাকা খরচ হয়েছে তা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে যান রাষ্ট্রপক্ষ। একই বছরের ৩০ আগস্ট আপিল বিভাগ বিষয়টি নিষ্পত্তি করে আমাকে ১৪ লাখ টাকা দেওয়ার রায় দেন।

ইউনুচ আলী বলেন, এর সাত আটদিনের মধ্যে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর আমি এ রায়ের নকল তুলে যারা ক্ষতিপূরণ দেবেন, তাদেরকে চিঠি দেই। এক মাসের মধ্যে ওই টাকা তাদের কাছ থেকে তুলে নেই। আশা করছি, তাদের (মন্টুর পরিবার) ক্ষতিপূরণের রায়ও দ্রুত প্রকাশ পাবে। এবং তারা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়ে নিতে পারবেন।  

১৯৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর পেপসি কোলার একটি ট্রাক কাকরাইলের আনন্দ ভবনের সামনে মোজাম্মেল হোসেন মন্টুকে চাপা দেয়।
 
পরে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
 
১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি মোজাম্মেল হোসেন মন্টুর স্ত্রী রওশন আখতার ক্ষতিপূরণ চেয়ে ঢাকা তৃতীয় সাব জজ আদালতে মামলা করেন।
 
২০০৫ সালের ২০ মার্চ বিচারিক আদালত ৩ কোটি ৫২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে দেন।
 
এর বিরুদ্ধে পেপসি কোলা হাইকোর্টে আবেদন করে। ২০১০ সালে ক্ষতিপূরণের টাকা কমিয়ে ২ কোটি ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করে রায় দেন হাইকোর্ট।
 
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধেও পেপসি কোলা আপিল করে। ২০১৪ সালের ২০ জুলাই আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দেন আপিল বিভাগ।

তবে মন্টুর পরিবারকে কী পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, তা পূর্ণাঙ্গ রায়ে পুননির্ধারণ করে দেবেন বলে সে সময় জানিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

এরপর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু গত ১০ এপ্রিল ও ১৩ এপ্রিল আপিল আবেদনটি আবার কার্যতালিকায় পুনরায় শুনানির জন্য আসে বলে জানান রওশন আখতার।

তিনি বলেন, ১৩ এপ্রিল আপিল বিভাগ আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দিয়ে আমাদের এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চূড়ান্ত রায় দেন।
 

আদালতে সাংবাদিক মন্টুর স্ত্রী রওশন আখতারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খলিলুর রহমান। পেপসি কোলার (বাংলাদেশ বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড) পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
 
আইনজীবী খলিলুর রহমান বলেন, বিষয়টি পুনঃশুনানি শেষে আপিল বিভাগ ক্ষতিপূরণের অর্থ নির্ধারণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি (ডিসপোজড অফ) করে গত ১৩ এপ্রিল রায় দেন।

সাংবাদিক মন্টুর স্ত্রী রওশন আখতার বলেন, নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এ মামলা পরিচালনা করে আসছি। এই দীর্ঘ সময়ের ধৈর্যের ফসল এ রায়।

‘যানবাহন আইন ভঙ্গ করে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে আমার স্বামীর জীবনহানির ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে দায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছিলাম। এ জাতীয় ঘটনায় দেশের নাগরিকরা এ রায়ে উপকৃত হবেন বলে আশা করছি’- বলেন তিনি।


মোজাম্মেল হোসেন মন্টু ১৯৪৫ সালের ১৫ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক হিসেবে সফল জীবনের অধিকারী মরহুম মন্টু ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর সাংবাদিকতা পেশাকে ব্রত হিসেবে নেন।

১৯৬৮ সালে তিনি দৈনিক সংবাদে সহ সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়ে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। ১৯৮৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর মৃত্যু পর্যন্ত সংবাদের বার্তা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৬
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।