ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

বাড়ি ভাড়া নির্ধারণের পূর্ণাঙ্গ রায় শিগগিরই

ইলিয়াস সরকার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৬
বাড়ি ভাড়া নির্ধারণের পূর্ণাঙ্গ রায় শিগগিরই

ঢাকা: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এলাকাভেদে মতামত, যুক্তি ও গণশুনানি করে ভাড়া নির্ধারণের কমিশন গঠনে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ‘শিগগিরই প্রকাশিত হচ্ছে’।
 
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এমন আশা প্রকাশ করেছেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।


 
অনুলিপি প্রকাশের পর আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিশন বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি এলাকাভেদে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণ করবে।
 
রশিদ দিয়ে মানসম্মত ভাড়া আদায়, ভাড়া বৃদ্ধির ওপর বিধি নিষেধসহ আইন অমান্যে বাড়ির মালিকদের দণ্ডের বিধান রেখে করা আইন মানা হচ্ছে না। বাড়ির মালিকরা তাদের মনমতো যেকোনো সময় ভাড়া বাড়াচ্ছেন এবং ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করছেন। এ কারণে ২৫ বছর আগে করা বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধান মানতে এবং প্রয়োগ করাতে ২০১৫ সালের ১ জুলাই ওই রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
 
‘রায় অনুসরণ করলে সমস্যার সমাধান হবে’
আদালতের এ রায় অনুসরণ করলে বাড়ি ভাড়া সম্পর্কিত চলমান বিভিন্ন সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
হাইকোর্টে রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বাংলানিউজকে বলেন, আশা করছি শিগগিরই এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ পাবে। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশনা মতে কমিশন গঠন করা হবে। আর এ কমিশন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এলাকাভেদে মতামত, যুক্তি ও গণশুনানি করে ভাড়া নির্ধারণ করবেন। এছাড়াও মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে কি কি কারণে বিরোধ হয় সে বিষয়টি বের করবেন।   কমিশনের এসব সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার আইন পরিবর্তন করে প্রয়োগ করলে বিদ্যমান সমস্যা দূর হবে বলে আশা করি। এ রায় অনুসারে কমিশন গঠনের পর তাদের সুপারিশ অনুসারে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করি।
 
হাইকোর্টে যে কারণে রিট
১৯৯১ সালে বর্তমানে প্রচলিত বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি জারি করা হয়। অন্যদিকে ১৯৯১ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই মহানগরীকে ১০টি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি)। এ আইনের বিধান কার্যকর না হওয়ায় এবং কোন এলাকার ভাড়া কতো হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করুক, এটি কার্যকর  চেয়ে ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
একই বছরের ১৭ মে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধান কার্যকর করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
 
রিট আবেদনে বলা হয়েছিলো, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে ভাড়ার রশিদ ও বাড়ি ছাড়ার জন্য নোটিশ দেওয়াসহ বিভিন্ন বিধান থাকলেও বেশিরভাগ সময় বাড়ির মালিকেরা সেটা পালন করছেন না।
এমনকি ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুসারেও ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না।
এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকরের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
 
রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১ জুলাই বিচারপতি বজলুর রহমান ও বিচারপতি রুহুল কুদ্দুসের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।
 
রায়ে যা বলেছিলেন হাইকোর্ট
বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি এলাকাভেদে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে ছয় মাসের মধ্যে একটি ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন’ কমিশন গঠন করতে নির্দেশ দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।
 
রায়ে বলা হয়, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সাত সদস্যের এ কমিশনের প্রধান থাকবেন আইন মন্ত্রণালয়ের মনোনীত একজন আইনজ্ঞ। গৃহায়ন, নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, একজন অর্থনীতিবিদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয় মনোনীত একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের একজন প্রতিনিধি, ভোক্তা অধিকার বা বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত কাজ বা গবেষণা করেন বা বেসরকারি সংস্থার একজন প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় মনোনীত যেকোনো সিটি করপোরেশনেরে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কমিশনে থাকবেন।
 
এ কমিশন আইনের সংস্কার প্রস্তাব, বাড়ির মালিক, আইনজ্ঞ, বিভিন্ন বিভাগ, ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টসহ পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলবে, প্রয়োজনে গণশুনানি করবে, তাদের মতামত ও যুক্তি গ্রহণ করবে, রাজধানীসহ ও অন্যন্য মহানগর শহর, অঞ্চলে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ এবং সবোচ্চ ও সর্বনিন্ম ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব দেবে। পাশাপাশি দেশের ভাড়াটিয়া ও মালিকের সমস্যা চিহ্নিত করে নিরূপন ও প্রতিকারে স্বয়ংসম্পূর্ণ আইনি কাঠামো প্রণয়নে সুপারিশ করবে।
 
অপর নির্দেশনায় বলা হয়, কমিশনের প্রস্তাব অনুসারে সরকার বিদ্যমান বাড়ি ভাড়া আইন সংস্কারেরও উদ্যোগ নেবে।
 
গঠিত কমিশন যেসব সুপারিশ করবে, তা আইনি কাঠামোর রূপ না পাওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী প্রতিটি ওয়ার্ডে বিশেষ করে ঢাকায় বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন করে নিয়ন্ত্রক নিয়োগের উদ্যোগ নিতেও বলেছেন হাইকোর্ট।

এছাড়া প্রস্তাবিত কমিশনের সুপারিশ আকারে আইনি কাঠামোতে আসার আগ পর্যন্ত শহরাঞ্চলে বেআইনিভাবে কোনো ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ বা ভয়ভীতি দেখানো হলে এবং কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তা যাতে দ্রুত মেটানো  এবং প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্তকে সুরক্ষার ব্যবস্থা যাতে নেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করতে থানার ওসিদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৬
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad