প্রতিবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ওই সার্কেল এএসপির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রোববার (১৯ মার্চ) বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
অবশ্য হাইকোর্টের গত ২৭ ফেব্রুয়ারির এক আদেশে ইতোমধ্যে ওই এএসপিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দৈনিক জনকণ্ঠে ‘বাউফলে ওসির রুমে নির্যাতন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘থানা হাজত থেকে এক আসামিকে ওসির রুমে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। তার নাম হাফিজুর রহমান বিজয়। বাবার নাম শামসুল হক খান। কনকদিয়া ইউনিয়নের কলতা গ্রামে তার বাড়ি’।
‘বিজয়ের মা জোসনা বেগম অভিযোগ করেন, রবিবার সন্ধ্যার দিকে একটি মামলায় তার ছেলে হাফিজুর রহমান বিজয়কে বাউফল থানার এসআই ফেরদৌস গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন এবং ওই দিন রাত ১২টার পর তাকে থানা হাজত থেকে বের করে ওসির রুমে এনে শারীরিক নির্যাতন করেন। রাত দেড়টা পর্যন্ত কয়েক দফা তার ছেলের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। লাঠি দিয়ে তার ছেলেকে পেটানো হয়েছে’।
‘বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার জানান, গ্রেফতারকৃত বিজয় তার ছেলের বন্ধু। তিনি সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে বাউফল থানার ওসি আযম খান ফারুকীর মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নির্যাতনের বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন। ওসি তাকে বলেন, ঘটনার সময় তিনি থানায় ছিলেন না। পরে এসে ঘটনাটি শুনেছেন। সার্কেল এএসপি নাকি তাকে ২-৩টি বাড়ি দিয়েছেন’।
পরে এ প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন দায়ের করেন জোসনা বেগম।
এ রিটের শুনানি নিয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সার্কেল এএসপি সাইফুল ইসলাম ও ওসি আযম খান ফারুকীকে তলব করেন হাইকোর্ট। ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
পাশাপাশি রুলও জারি করেন আদালত।
এ আদেশ অনুসারে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে হাজির হয়ে বাউফলের সার্কেল এএসপি সাইফুল ইসলাম ও বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম খান ফারুকী ব্যাখ্যা দাখিল করেন।
ওইদিন আদালতে ওসির পক্ষে অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, এএসপির পক্ষে অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার তাহসিনা তাসনিম মৃদু।
আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যের্তিময় বড়ুয়া ও অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন।
পরে এএসপিকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের আদেশ দিয়ে আদালত নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করে ১৯ মার্চের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পুলিশের আইজিপিকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১৯ মার্চ দিন ধার্য করেন।
সে আদেশ অনুসারে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের অ্যাডিশনাল এসপি মো. আবুল হোসেন মোড়ল ও বরিশাল জোনের পুলিশ পরিদর্শক মো. হেলাল উদ্দীন এ ঘটনার অনুসন্ধান করেন।
তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘১০ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানা এলাকায় যৌথভাবে গোপনে ও প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করি। অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত, ভিকটিমের চিকিৎসা সনদপত্র, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, বাউফল থানার ২৩ জানুয়ারির ২১ নম্বর মামলার আসামি কে এম হাফিজুর রহমান ওরফে বিজয়কে মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই ফেরদৌস আলম ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করে সাতটা ৫০ মিনিটে থানা হাজতে আটক রাখেন। বাউফল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম দিবাগত রাত অনুমান সাড়ে বারোটার সময় বিজয়কে থানায় সেন্ট্রিরত কনস্টেবলের মাধ্যমে হাজত থেকে বের করে ওসির কক্ষে এনে বেধড়ক মারপিটসহ শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়’।
বিজয়ের আইনজীবী ফারুক হোসেন বলেন, পুলিশ প্রধানের পক্ষ থেকে এ প্রতিবেদন রোববার আদালতে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।
আদালত প্রতিবেদন দেখার পর পুলিশের ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন।
ফারুক হোসেন বলেন, পুলিশের ওই এএসপি থানায় আসামিকে নির্যাতন করে সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
ইএস/এএসআর