ঢাকা, শনিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘রাষ্ট্রপতির দোহাইতে আপিল বিভাগের কষ্ট’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৭
‘রাষ্ট্রপতির দোহাইতে আপিল বিভাগের কষ্ট’ সুপ্রিম কোর্ট

ঢাকা: ‘রাষ্ট্রপতির মতো শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির যখন দোহাই দেন,তখন কষ্ট লাগে’।

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশে রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (০৪ এপ্রিল) এ মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে গেজেট প্রকাশে আরও দুই সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এ সময় সর্বোচ্চ আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সময় আবেদনের এ বিষয়টি এলে আপনি মাথা নিচু করে থাকেন। রাষ্ট্রপতির বিষয় টানেন। রাষ্ট্রপতি সবার শ্রদ্ধেয়, তাকে কেন টানেন? তার (রাষ্ট্রপতির) দোহাই যখন দেন, তখন আমাদের কষ্ট লাগে’।

‘আপনি যেটি বললেন, সেটি ঠিক থাকবে তো? ০৮ মে পর্যন্ত সময় দিলাম। এরপর আর কোনো অজুহাত থাকবে না বলে আশা করি। যাই হোক, আপনার হাসিটা যেন মিলিয়ে না যায়। কষ্ট লাগে, যখন আপনি মাথা নিচু করে থাকেন’।

সর্বশেষ গত ২৮ মার্চও এক সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। ।

১৯৯৯ সালের ০২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিলো।

আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ০৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, ‘শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিলো ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী’।

এরপর সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। একইসঙ্গে ০৬ নভেম্বরের মধ্যে তা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়।

গত বছরের ০৬ নভেম্বর সে অনুসারে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাতে পারেননি।

পরে আপিল বিভাগ বিধিমালা চূড়ান্তের বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়ে ০৭ নভেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেন।

ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল আট সপ্তাহের সময়ের আবেদন জমা দেন। যাতে বিধিমালাটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন তিনি। সর্বোচ্চ আদালত ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেন।

গত বছরের ২৪ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল গেজেট প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় চাইলে আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করেন। পরে ০১ ডিসেম্বর আইনমন্ত্রী ফিলিপাইনে রয়েছেন বলে ফের এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়।

সময় মঞ্জুরের পরও ০৮ ডিসেম্বরের পর থেকে আরও কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নেন রাষ্ট্রপক্ষ।

গত বছরের ০৮ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর হাজির করতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এর মধ্যে ১২ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত দেন রাষ্ট্রপতি।

পরে অবশ্য অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে জানান, আইন মন্ত্রণালয়- সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে এটির বিশেষ অংশ সংশোধন করে পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে।  

এ কারণে এবং দুই সচিব আদালতে হাজির হওয়ার পর লিখিত ব্যাখ্যা দিলে গেজেট প্রকাশে আরও সময় দেন আদালত।

এরপর থেকে আরও কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও গেজেট প্রকাশ করতে পারেননি রাষ্ট্রপক্ষ।

আদালতের নির্দেশে একবার বার বার সময় নেওয়ার কারণ লিখিত আকারেও জানিয়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, ০৪ এপ্রিল, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।