বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) সকালে সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ. কে. এম এনামুল হক এ রায় দেন।
একইসঙ্গে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেকের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ওই নারীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার জামতৈল এলাকার মো. আব্দুস ছামাদ মাস্টারের ছেলে মো. রেজাউল করিম সাগর (৩২), জামালপুর সদরের মোহনপুর এলাকার মৃত সলিম উদ্দিনের ছেলে মো. জামাল উদ্দিন (৩৬) ও মৌলভীবাজার সদরের বেকামোড়া এলাকার মো. ইয়াবর মিয়ার ছেলে মো. শাহাবুদ্দিন (২৭)।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত নারী হলেন- মো. রেজাউল করিম সাগরের স্ত্রী সানজিদা আক্তার লিপি (৩০)।
নিহত আব্দুর রহমান রিয়াদ নোয়াখালীর সেনবাগ থানার নবীপুর এলাকার আবুধাবী প্রবাসী খাজা মাইন উদ্দিনের ছেলে।
গাজীপুরের আদালত পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম জানান, আব্দুর রহমান রিয়াদ গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগআলীতে বসবাস করে উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে বিবিএতে লেখাপড়া করতেন। এসএম মাতুল কোচিং সেন্টারে কোচিং করার সময় লিপির সঙ্গে রিয়াদের ঘনিষ্ঠতা হয়।
একপর্যায়ে ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিয়াদকে লিপি তার স্বামী সাগরের কাছে তুলে দেয়। সাগর ২৫ জুলাই আবুধাবীতে থাকা বিয়াদের বাবাকে ফোনে জানায়, বিয়াদকে তারা অপহরণ করেছে। আইনের আশ্রয় নিলে মেরে ফেলা হবে। এর দু’দিন পর ২৭ জুলাই ফের ফোন করে রিয়াদের বাবার কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরদিন নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে ৫ লাখ টাকা না দিলে কান কেটে ফেলা হবে বলে রিয়াদের বাবার কাছে মেসেজ পাঠায়।
এ ঘটনায় রিয়াদের মামতো ভাই সার্জেন্ট (অব.) জাকির হোসেন ৩০ জুলাই টঙ্গী থানায় অপহরণের এজাহার এবং র্যাব-১ এর কাছে আবেদন করেন।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে র্যাব প্রথমে আসামি সাগরকে এবং পরে জামালপুর থেকে বাকি ৩ আসামিকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি শাহাবুদ্দিন স্বীকার করে তারা তিনজন মিলে রিয়াদকে হত্যা করে জামালপুরের একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখে।
এদিকে রিয়াদের মরদেহ জামালপুরের পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে উদ্ধার করে এবং আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম দাফন করে। তার মৃত্যুর ৩৬ দিন পর করব থেকে মরদেহ উত্তোলন করে জামালপুরে ময়না তদন্ত করা হয়।
তদন্ত শেষ প্রথমে টঙ্গী থানা পুলিশ ও পরে সিআইডি পুলিশ ৪ আসামির বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৬৫, ৩০২/৩৪ ধারায় অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আদলতের বিচারক এ রায় দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে পিপি অ্যাডভোকেট মো. হারিজ উদ্দিন আহমেদ এবং আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মো. ওয়াহিদুজ্জামান আকন্দ, মো. আব্দুল জলিল ও জেবুন্নাহার মিনা মামলাটি পরিচালনা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৭/আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা
আরএস/জেডএস