একইসঙ্গে সাজাপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। খালাস পেয়েছেন অন্য আসামি তারাপুর চা বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত।
বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) দুপুরে মামলাটির রায় ঘোষণা করেন সিলেটের মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরোর আদালত।
বেলা পৌনে একটার দিকে রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। সাজা পরোয়ানা দিয়ে ফের তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রাগীব আলীর আত্মীয় মোস্তাক মজিদ আদালতে হাজির হলে রায় ঘোষণার পর তাকেও কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত।
১৬ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রাগীব আলীর জামাতা আবদুল কাদির ও মেয়ে রুজিনা কাদির পলাতক।
মামলায় চারটি ধারায় পৃথক রায় দেন আদালত। এর মধ্যে ৪৬৭ ও ৪৬৮ ধারায় রাগীব আলীকে ৬ বছর করে ও অন্যদের ৭ বছর করে এবং ৪২০ ও ৪৭১ ধারায় রাগীব আলীসহ অন্যদের প্রত্যেককে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচার শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। কিন্তু মামলায় অভিযুক্ত রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাইয়ের মানসিক স্বাস্থ্যগত কারণ দেখানোয় রায় ঘোষণা পিছিয়ে যায়।
৩০ মার্চের মধ্যে আব্দুল হাইয়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিলে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসককে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে প্রতিবেদন না দেওয়ায় ফের ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
সে প্রেক্ষিতে গত ০২ এপ্রিল আদালতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তাতে স্বাস্থ্যগত মানসিক সমস্যা ধরা পড়েনি।
প্রতিবেদন দাখিলের পর পরই উচ্চ আদালতের নির্দেশে আদালত স্থগিত করা রায় ঘোষণার নতুন দিন ০৬ এপ্রিল ধার্য করেন।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক আদালতকে জানান, ২৫ মার্চ সিলেটে জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে অভিযান চলাকালে বোমা হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় প্রতিবেদন দাখিলে দেরি হয়।
গত ০২ ফেব্রুয়ারি তারাপুর চা বাগানের ভূমি বন্দোবস্তের নামে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি মামলার রায় দেন একই আদালত। রায়ে রাগীব আলী ও তার ছেলেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া মামলায় আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুর পর পলাতক থাকাবস্থায় পত্রিকা প্রকাশের কারণে রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্য একটি মামলার রায়ে তাদেরকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালত। বর্তমানে এসব মামলায় কারাগারে সাজা ভোগ করছেন রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাই।
দেবোত্তর সম্পত্তির চা বাগান বন্দোবস্ত নেওয়া ও চায়ের ভূমিতে বিধি বহির্ভূত স্থাপনা করার অভিযোগে ২০০৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আবদুল কাদের বাদী হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি ও সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দু’টি করেন। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে মামলার নিষ্পত্তি করে দেয় পুলিশ।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের স্বাক্ষর জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের দু’টি মামলা গত বছরের ১৯ জানুয়ারি পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট।
গত বছরের ১০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল এবং ১২ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে এদিনই রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাই সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান। ১২ নভেম্বর দেশে ফেরার পথে জকিগঞ্জ সীমান্তে আবদুল হাই ও ২৩ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জে গ্রেফতার হন রাগীব আলী।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর থেকে আলোচিত এ মামলায় ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। গত ১৭ জানুয়ারি রাগীব আলীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তারই মালিকানাধীন মালনিছড়া চা বাগানের সহকারী ম্যানেজার মাহমুদ হোসেন চৌধুরী ও আব্দুল মুনিম।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিলেট জেলা জজ আদালতের পিপি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, অতিরিক্ত পিপি শামসুল ইসলাম ও আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৭
এনইউ/এএসআর