হাজারীবাগে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ সম্পন্ন হওয়ার পর পরই জরিমানার আদেশ পুনর্বিবেচনা ও স্থগিত চেয়ে ট্যানারি মালিকদের করা দু’টি আবেদনের রায়ে রোববার (০৯ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
যেসব ট্যানারি হাজারীবাগ থেকে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে, সেখানে তাদের গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ ১৫ দিনের মধ্যে (আদালতের আদেশের অনুলিপি পাওয়ার পর) দিতেও আদেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
এদিকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের পর হাজারীবাগের জায়গা ব্যবসায়ীরা যদি অন্য কোনো কাজে লাগাতে চান চান, তাহলে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র প্রদান সাপেক্ষে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আবেদন দু’টির শুনানিকালে গত ৩০ মার্চের আদেশে আপিল বিভাগ ০৬ এপ্রিলের মধ্যে ট্যানারি ‘ক্লোজ ডাউন’ করার কথা বলেছিলেন ট্যানারি মালিকদের। এরপর উচ্চ আদালতের নির্ধারিত জরিমানা স্থগিতের আবেদনটি ০৯ এপ্রিল বিবেচনার কথা জানিয়ে একই দিন শুনানির দিন ধার্য করেন।
এরই মধ্যে শনিবার (০৮ এপ্রিল) শুরু করে রোববার সকালের মধ্যে হাজারীবাগে থাকা ট্যানারিগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ,পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে হাজারীবাগে ট্যানারি চালু রাখায় গত বছর ১৫৪ প্রতিষ্ঠানের মালিককে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা নির্ধারণ করে দেন আপিল বিভাগ। পরে মালিকরা এ আদেশের রিভিউ চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন জানান।
গত ০২ মার্চ হাজারীবাগে রয়ে যাওয়া সর্বোচ্চ আদালতের নির্ধারণ করে দেওয়া ট্যানারিগুলোর ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বকেয়া জরিমানা দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের ওই আদেশও স্থগিত চেয়ে আবেদন জানায় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।
গত ১৯ মার্চ চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে এসব আবেদন শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরও আগে হাজারীবাগে থাকা ট্যানারিগুলো সাভারে সরাতে আরও তিনমাস সময় বাড়ানো হয়েছে- এমন খবর যুক্ত করে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আবেদন করে। এতে সাভারে স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত হাজারীবাগে থাকা ট্যানারি কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্নের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
আদালত এ বিষয়ে জানতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নন, এমন একজন কর্মকর্তাকে তলব করেন। পরে কর্মকর্তা এসে হাইকোর্টে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
এরপর গত ০৬ মার্চ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ হাজারীবাগে থাকা ট্যানারিগুলো বন্ধের আদেশ দেন।
এ আদেশও স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদারের চেয়ারম্যান।
গত ১২ মার্চ ট্যানারি মালিকদের করা ওই আবেদন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ।
এরপর তারা হাইকোর্টের ০৬ মার্চের আদেশ মডিফিকেশন চেয়ে আবেদন করেন। এতে ঈদ-উল আযহা পর্যন্ত হাজারীবাগে থাকার সুযোগ চান। ওই আবেদনও ২৯ মার্চ খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ফলে হাজারীবাগে থাকার আর কোনো সুযোগই বাকি থাকেনি মালিকদের।
ইতোমধ্যেই হাজারীবাগে এতোদিন রয়ে যাওয়া ১৪২টি ট্যানারি কারখানার গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ সম্পন্ন হয়েছে। এখন ওই ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৭
ইএস/এএসআর