সিলেটে চুরির অপবাদে পিটিয়ে শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় ঘোষণার সময় এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) এ রায় দেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রায়ে রাজন হত্যার দায়ে প্রধান আসামি কামরুল ইসলামসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
সৌদি আরবে আটক কামরুল ইসলাম (২৪) সিলেট মহানগরীর জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য তিনজন হলেন- চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫), তাজ উদ্দিন বাদল (২৮) ও পলাতক জাকির হোসেন পাভেল।
হত্যাকাণ্ডের ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কমিয়ে ছয়মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত ১০ জনের মধ্যে অন্য ৯ জনকে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার পুরোটাই বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
বহাল রয়েছে কামরুলের দুই ভাই মুহিত আলম ও আলী হায়দার ওরফে আলী এবং পলাতক আসামি শামীম আহমদের সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং অন্য দুই আসামি আয়াজ আলী ও দুলালের এক বছর করে কারাদণ্ডের রায়ও।
দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে দশ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে ৩ মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত, যা বহাল রেখেছেন উচ্চ আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেন, ‘শিক্ষার অভাবে দেশের অধিকাংশ মানুষের মৌলিক আইন সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব রয়েছে’।
‘জনগণকে আইন ও আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন করতে রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা ও প্রচারকদের এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক আন্দোলন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর আইন সম্পর্কে সচেতনতার জন্য বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত’।
পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, ‘পুলিশ বা আইনি সংস্থা ছাড়া কোনো সাধারণ ব্যক্তি যদি কোনো অভিযোগে কাউকে ধরেন, তাহলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে থানায় পাঠাতে হবে অথবা পুলিশকে জানাতে হবে। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত বা ধারণা সঠিক নাও হতে পারে। এ মামলায় আসামিপক্ষ দাবি করেছেন, রাজন ভ্যান চুরি করেছে বলে বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। কিন্তু তা কোনো পক্ষের সাক্ষ্যে প্রমাণিত হয়নি’।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৭
ইএস/এএসআর