রোববার (২৩ এপ্রিল) ১৯৯৬ সালে শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের করা এ মামলার রায় ঘোষণা করেন রাজধানীর পুরানা পল্টনে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে স্থাপিত স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর আলী শেখ।
আসামিদের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ১৭ ধারার ই (২) বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তা প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হলো বলে রায়ে উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান। আসামি এম এ রউফ চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ বাহারুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম খান এবং আসামি সাঈদ এইচ চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আলহাজ মো. বোরহান উদ্দিন।
এ মামলায় ৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন- ডিএসই’র মহাব্যবস্থাপক রুহুল খালেক ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দেলোয়ার হোসেন এবং বিএসইসি’র সহকারী পরিচালক এনামুল হক ও মনিরউদ্দিন আহমেদ। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদেরকে জেরাও করেন।
এরপর আত্মপক্ষ সমর্থনে আসামি এম এ রউফ চৌধুরী ও সাঈদ এইচ চৌধুরী নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, আসামিরা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ সময়ে তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময়ে মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করে।
এক নম্বর আসামি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ ওই সময়ে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করে, যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড অনুসারে আসামিরা এসিআই লিমিটেডের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করেন। অথচ ব্যাংক রেকর্ড অনুসারে শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি, যার মধ্যে ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
একইভাবে আসামিরা ডিভিপির মাধ্যম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপির মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫০০টি। এসব ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইন্দোসুয়েজ ব্যাংক ব্যবহার করতো। আসামিদের এ ধরনের কার্যকলাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, অপকার ও অনিষ্ট করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ২১ ধারা বলে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রতিবেদনে আসামিরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ১৭ ধারার ই (২) বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। আর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ২৪ ধারার অধীনে আসামিদের শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।
এদিকে মামলার চার আসামির মধ্যে অন্য দু’জন তৎকালীন পরিচালক আনু জায়গীরদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমানের বিচারের কাজ আগামী ০২ মের পর শুরু হবে। কারণ, এ মামলায় মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচারকাজে দুই দফায় ৬ মাস করে এক বছরের স্থগিতাদেশ দেন উচ্চ আদালত। প্রথমবার গত বছরের ১৭ এপ্রিল এ বিচারকাজে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে ২৯ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন আদালত, যা আগামী ২ মে পর্যন্ত কার্যকরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭
এমএফআই/এএসআর