সাভারের এক হত্যা মামলার আপিলের রায়ের সময় ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস’ বলে আপিল বিভাগের মন্তব্য করা রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির ব্যাখ্যায় এমনটি জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এ রায়ের প্রেক্ষিতে এখন যতো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়, হাইকোর্ট বা আপিল বিভাগ যদি করেন, তবে তার ইফেক্টটা হবে আমৃত্যু কারাগারেই থাকতে হবে’।
‘আপিল বিভাগের রায় অ্যাপ্লিকেবল হবে। যার জীবন চলে যেতো ফাঁসিতে, তাকে যদি যাবজ্জীবন করা হয়, তারপর তিনি বেরিয়ে চলে যাবেন, এটা হয় না। আইন ব্যাখ্যা করেই এটা করা হয়েছে। তবে ইন্ডিকেশনটা কি সেটা পুরো রায় না পড়ে বলা যাবে না’।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপিল বিভাগ যে রায়টি দিয়েছেন - এ বিষয়টি হলো একজন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড ছিল। এই মৃত্যুদণ্ড হাইকোর্ট থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হয়েছে। এক্ষেত্রে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত হলো, তাকে আমৃত্যুই কারাগারে থাকতে হবে। যার মৃত্যুদণ্ড আদেশ ছিল, এটাকে কমিয়ে যেটা যাবজ্জীবন দেওয়া হয়, এই যাবজ্জীবনের অর্থ হলো আমৃত্যু কারাদণ্ড’।
‘এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে ক্ষমতা, জেল কোডের ক্ষমতা এগুলো অ্যাপ্লিকেবল হবে না, কমানো যাবে না। শুধু রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা- তিনি এক্সারসাইজ করতে পারবেন, তিনি কমাতেও পারবেন, তিনি মাফও করতে পারবেন। এ বিষয়টিই হলো এখানে’।
‘অন্যান্য যেগুলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয় নিম্ন আদালতে, সেগুলোর ক্ষেত্রে যা এখন আইনে আছে, তাই চলবে’।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এ রায় প্রকাশের ফলে সবার মনে প্রশ্ন জেগেছে যে, এটি সবক্ষেত্রে হবে কি-না? এ মামলাটি একটি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লোককে যাবজ্জীবনে রূপান্তরিত করেছিলেন হাইকোর্ট। এ যাবজ্জীবন রূপান্তরের পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে, এই সাজাটা কতোদিন হবে, সেক্ষেত্রে আপিল বিভাগ বলে দিয়েছেন, আমৃত্যু ধরতে হবে তার সাজা। এক্ষেত্রে জেল কোড বা অন্যান্যভাবে তার সাজা কমানোর কোনো সুযোগ নেই’।
আইন সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পেনাল কোড সংশোধনের বিষয় পার্লামেন্ট সব সময় পারে, সেটি ভিন্ন কথা। আইনে যেটা যেভাবে যা আছে, সেটাকেই আপিল বিভাগ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন’।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি হত্যা মামলার আপিলের রায়ের সময় আপিল বিভাগ ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস’-এমন মন্তব্য করেন বলে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
তবে ওইদিন অন্যান্য মামলার আসামির ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে কি-না, সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, ‘সকলের ক্ষেত্রে এ রায় প্রযোজ্য হবে কি-না, সেটি পূর্ণাঙ্গ রায় না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না’।
২০০১ সালে সাভারে জামান নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় ২০০৩ সালে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। হাইকোর্টে আপিলের পর বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল থাকে। আপিলের পর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন সর্বোচ্চ আদালত।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৯২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ ওই রায় প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
ইএস/এএসআর