মঙ্গলবার (০৯ মে) দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মুলতবির এ আদেশ দেন। সোমবার (০৮ মে) থেকে শুরু হয়েছে এ শুনানি।
গত দু’দিনে হাইকোর্টের দেওয়া রায় পড়া শেষ করেছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। এছাড়া অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু বা আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে লিখিত মতামত জমা দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও এম আই ফারুকী।
গত ০৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পাওয়া ১২ জন অ্যামিকাস কিউরির অন্য ৮ জন হলেন- এ এফ হাসান আরিফ, আজমালুল হোসেন কিউসি, রফিক-উল হক, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, টিএইচ খান, এ জে মোহাম্মদ আলী, ফিদা এম কামাল ও শফিক আহমেদ।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সকালে দুই সপ্তাহের সময়ের আবেদন জানালেও তা নামঞ্জুর করে শুনানি অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ০৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ০৯ নভেম্বর এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
২০১৫ সালের ২১ মে রুলের শুনানি শুরু হয়। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এছাড়া অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শুনানি করেন শীর্ষ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি।
গত বছরের ১০ মার্চ এ রুলের শুনানি শেষে ০৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।
এর মধ্যে গত বছরের ২৫ এপ্রিল অসদাচারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দুই বিচারপতির দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত বছরের ১১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। ০৮ সেপ্টেম্বর অবৈধ বলে দেওয়া রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণকারী বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের রায় প্রকাশিত হয়।
গত ০৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। ০৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ অ্যামিকাস কিউরিদের নিয়োগ দিয়ে ০৭ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করেন। ওইদিন সময়ের আবেদন জানিয়ে আরও দু’মাস বাড়িয়ে নেন রাষ্ট্রপক্ষ।
১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে।
মার্শাল প্রক্লামেশনে করা পঞ্চম সংশোধনীতে এক্ষেত্রে ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ষোড়শ সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সংসদকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৭
ইএস/এএসআর