রোববার (১৪ মে) মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাবাসে থাকা সাঈদীর রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানির প্রথম দিন শেষে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যে সাজা, তার বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন করেছেন এই বলে যে, তিনি (সাঈদী) ওই সময় পিরোজপুরের পারেরহাটে ছিলেন না।
‘এছাড়া তাদের রিভিউয়ে আরেকটি বিষয়ে বলা হয়েছে যে, যেসব অভিযোগে (চার্জ) সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সেগুলো নাকি নানা রকম বিষয় বিবেচনা না করেই আদেশ দেওয়া হয়েছে’।
রাষ্ট্রপক্ষে রিভিউ করা হয়েছে উল্লেখ করে মাহবুবে আলম বলেন, যেহেতু তিনি (সাঈদী) ইব্রাহীম কুট্টি ও বিশাবালী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তবে সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছেন, বিশাবালী হত্যাকাণ্ডে আদেশ দিলেও তিনি মুখ্য আসামি নন, বরং সহায়তাকারী। এই যে পর্যবেক্ষণ, এই যে ফাইন্ডিংস্, এটির বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ করেছি। আমাদের দাবি হলো, তিনি হুকুমদাতা হিসেবেই হোক বা সেখানে উপস্থিত থেকে প্ররোচনা দিয়েই হোক, যদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকেন, আর সর্বোচ্চ আদালত যেখানে বলেছেন, তিনি অপরাধী, তাই তাকে ফাঁসি দেওয়াটাই ছিল বাঞ্ছনীয়। সে ফাঁসির জন্যই আমাদের রিভিউ’।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘সাধারণত রিভিউ আবেদন খারিজ হয়, এটিই দেখে আসছি। আদালত সে বিষয়ে বলেছেন, রিভিউ আবেদন উপস্থাপন করলেই আমরা খারিজ করে দেবো, এটি ঠিক না। তাতে যদি সারবত্তা থাকে, অবশ্যই বিবেচনা করবো’।
সাঈদীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘তিনটি চার্জেই আপিল বিভাগ তাকে (সাঈদীকে) আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। আমরা সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে দেখাতে চেষ্টা করেছি, যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে এ সাজা দেওয়া হয়েছে, সেটি সঠিক হয়নি। এর পুনর্বিবেচনা দরকার’।
এর আগে সকালে শুনানির জন্য মামলাটি উপস্থাপন করা হলে আপিল বিভাগ অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, ‘আপনি তো ফাঁসি চেয়েছেন। ওনারা (খন্দকার মাহবুব) খালাস চেয়েছেন। আগে ওনাদেরটা শুনি’।
এরপর খন্দকার মাহবুবকে আদালত বলেন, ‘কয়টা চার্জ নিয়ে সাবমিশন করবেন?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনটি। ১০, ১৬, ১৯ নম্বর চার্জ। যেগুলোতে সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছিলো’।
আদালত বলেন, ‘আমরা শুনবো, ফ্যাক্টসে বললে হবে না। ল’ পয়েন্টে আর্গুমেন্ট করতে হবে’।
তখন খন্দকার মাহবুব লিখিত যুক্তিতর্ক জমা দিয়ে শুনানি শুরু করেন। শুনানিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় সাঈদী যশোরে ছিলেন, এমন প্রসঙ্গ এলে আদালত বলেন, ‘আপনি শুধু ওয়াজ করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে গিয়েছিলেন যশোর জেলায়। আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তখন ওয়াজ করতে আপনি পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে আছেন, সেটি কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না। সাধারণত ওয়াজ হয় ধান কাটার পর শীতকালে। আপনি বলেছেন, মে মাসে। মে মাসে তো বর্ষাকাল। এখনও কি এই সময়ে ওয়াজ হয়? এখনতো অনেক উন্নতি হয়েছে, তারপরও কি মার্চ এপ্রিল কিংবা মে মাসে ওয়াজ হয়?’
খন্দকার মাহবুব উত্তরে বলেন, ‘হয়, একটি লার্জ স্কেলে আরেকটি ছোট স্কেলে হয়’।
এক পর্যায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘এখন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই হচ্ছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, যারা চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন, তাদের অনেকেই ডিরেক্টলি পাকিস্তান আমলের লোক (পাকিস্তানপন্থী)’।
আদালত আরও বলেন, ‘তখন দেলাওয়ার হোসেন শিকদার ছিলেন। বলা হচ্ছে, আমাদের সন্দেহ লাগছে, মে মাসের পর আপনি (সাঈদী) এলাকায় যান, এটি আমাদের পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন’।
খন্দকার মাহবুবের শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রপক্ষে শুনানির জন্য দাঁড়ালে আদালত বলেন, ‘সোমবার আপনি সাবমিশন রাখবেন। আসামিপক্ষের বক্তব্যের জবাব দেবেন’।
তখন মাহবুবে আলম বলেন, ‘ওনারাতো ফ্যাক্টসে বলেছেন। রিভিউতে এটি ঠিক না। আমিতো ফাঁসি চাই’।
এদিকে সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরদের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আপিল বিভাগ। রায়ের সে অংশ বাদ দিতে আবেদনের কথা জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। পরে তিনি বলেন, ‘আদালতে আমাদের এ আবেদনের কথা অবহিত করেছি’।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৭
ইএস/এএসআর
** সাঈদীর রিভিউ আবেদনের শুনানি ফের সোমবার
** সাঈদীর পক্ষে শুনানি শেষ, রাষ্ট্রপক্ষের চলছে
** সাঈদীর রিভিউ আবেদনের শুনানি চলছে