এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরুর আগে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার (২২ মে) আপিল শুনানি শুরুর দিনে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে বলেন, ‘এটা একটা সেনসশন্যাল কেইস।
এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ মান্নান মোহন ও জাহিদ সরওয়ার কাজল এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
পরে এম এম মান্নান মোহন শুনানি শুরু করেন। প্রথমদিনে তিনি পেপারবুক থেকে মামলার এফআইআর, সুরতহাল রিপোর্ট, ময়না তদন্তের রির্পোট, জব্দ তালিকা এবং চার আসামির ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি উপস্থাপন করেন।
মামলাটি বিরতিহীনভাবে চলবে উল্লেখ করে এম এ মান্নান মোহন বলেন, মঙ্গলবার (২৩ মে) ফের শুনানি শুরু হবে।
গত ১৬ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর সাত খুনের দুই মামলার রায়ে নূর হোসেন ও র্যাবের বরখাস্তকৃত তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত। এ মামলার ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ জনের মধ্যে গ্রেফতার ও আত্মসমর্পণ করে কারাগারে থাকা ২০ জন নিয়মিত ও জেল আপিল করেছেন। তারা হচ্ছেন- প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা, হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়্যব আলী, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সিপাহী আসাদুজ্জামান নূর, সৈনিক আবদুল আলীম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া ও আরওজি-১ এ বি মো. আরিফ হোসেন এবং নূর হোসেনের ৬ সহযোগী মূর্তজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, আবুল বাশার, রহম আলী ও জামাল উদ্দিন সরদার।
পলাতক যে ৬ আসামি আপিল করেননি তারা হলেন- র্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ ও সৈনিক তাজুল ইসলাম এবং নূর হোসেনের তিন সহযোগী ভারতে গ্রেফতারকৃত সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া ৯ জনও র্যা বের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ও সদস্য। তাদের মধ্যে কনস্টেবল (পরে এএসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে নৌ-থানায় কর্মরত) হাবিবুর রহমানকে ১৭ বছর, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল বাবুল হাসান, কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন ও সিপাহী নুরুজ্জামানকে ১০ বছর এবং এএসআই বজলুর রহমান ও হাবিলদার নাসির উদ্দিনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
তাদের মধ্যে পলাতক ২ জন হচ্ছেন- র্যাবের চাকরিচ্যুত কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান ও এএসআই কামাল হোসেন।
সব মিলিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৫ জনের মধ্যে কারাগারে আছেন ২৭ জন আর পলাতক ৮ জন।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের তিনদিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় নিহত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম।
সাত খুনের ঘটনায় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সহকর্মী হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে একই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
দু’টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম একসঙ্গে শেষ করে রায় দেন আদালত।
** সাত খুনের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি চলছে
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩১ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৭
ইএস/এএসআর