নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট না হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি চলাকালে আবারও অসন্তোষ প্রকাশ করে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার (২৯ মে) গেজেট প্রকাশে আরও দুই সপ্তাহ সময় দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
সকালে শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দুই সপ্তাহ সময়ের আবেদন জমা দেন।
তখন প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্যে করে বলেন-‘কি?’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সময়’।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কারণটা কি?’ অ্যাটর্নি জেনারেল- ‘প্রসেস চলছে’।
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘আমরা হাসবো না কাঁদবো?। হাসার জন্যওতো মনের একটা কষ্ট হয়। যাই হোক, আমি কিছু বলছি না। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হয়ে গেছে। কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে। কিছু অনিয়ম আছে। এগুলো নিয়ে সারাজীবন নয়। আমরা চাচ্ছি, একটা সিস্টেমে চলে আসতে। প্রধান বিচারপতি অনিয়ম থেকে নিয়মে আসতে গেলে বলেন- গেলো গেলো’।
‘পত্রিকায় বলা হয়, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের দ্বন্দ্ব। আপনার মিনিস্ট্রিকে (আইন মন্ত্রণালয়) বলবেন, জেনারেল ক্লজ অ্যাক্ট ২১ পড়তে। সরকারকে বলবেন- যেসব বিচারক প্রেষণে আছেন, তারা সরকারি কর্মচারী না। সুপ্রিম কোর্ট জানতে চেয়েছিলেন, প্রেষণে থাকাদের মধ্যে কারা বিদেশে যান, তাদের নাম’।
গত ০৯ মে সুপ্রিম কোর্টের জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয় ‘বিচারিক পদে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, আইন মন্ত্রণালয়, সংসদ সচিবালয় বা যেখানে প্রেষণে কর্মরত থাকুক না কেন, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া বিদেশ গমন না করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে’।
এরপর গত ১৬ মে আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে গত বছরের ১১ এপ্রিল মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা একটি চিঠির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের একটি স্মারকপত্রের প্রেক্ষিতে অধস্তন আদালতের বিচারকরা প্রেষণে কর্মরত থাকাকালে বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ গ্রহণের আবশ্যকতা নেই। রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়ে প্রেষণে থাকা বিচারকরা বিদেশ গমন করেছেন এবং করছেন’।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যতো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে ডেপুটেশনে দিয়েছি, যদি তাদের প্রত্যাহার করি, তাহলে কারো কিছু করার নেই’।
‘বিচারকদের ডেপুটেশনে দিয়ে নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে কাজ করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। ১৮৯৭ সালের সেকশন জেনারেল ক্লজ অ্যাক্ট ২১ দেখেন। যদি না হয় এটা ডিলেট করে দেন। এটা এতো দিন ধরে চলে আসছে’।
তিনি বলেন, ‘আপনারা বিচার বিভাগকে বিক্ষুব্ধ করবেন না। রাষ্ট্রপতির অনুশাসন বলে এমন কিছু করতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো ফাইল পাঠিয়ে যদি বলা হয়, করবেন, তখন তিনি হ্যাঁ বলেন, না বললে, না বলেন। তাই বলছি, ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়’।
‘ভুল বুঝাবুঝি যতো কম হয়, ততোই ভালো। তারা (আইন মন্ত্রণালয়) সুপ্রিম কোর্টের ওপর আদেশ করবে মনে করলে ভুল করবে। তারা আইন না জেনে একের পর এক ব্যবধান সৃষ্টি করছে। রাষ্ট্র এ রকম করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত সিনিয়র বিচারকরা চিন্তা করে নেন’।
‘তারা যদি মনে করে যে, আইনের একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে দেবে, তাহলে খুব ভুল করবে’।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আপনারা যদি আইন না জানেন, তাহলে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা চাইবেন। বিডিআরের মামলা কোন আইনে চলবে সেটা আমাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আমরা বলে দিয়েছি। সংবিধান অনুসারে ব্যাখ্যা আমরা দেবো, নির্বাহী বিভাগ নয়। এগুলো মনে করে চলবেন’।
‘অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্কর, মারাত্মক হয়ে যাবে। তারা যদি আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলে এটাই কারেক্ট, খুব ভুল হয়ে যাবে’।
এর আগে গত ১৫ মে আপিল বিভাগ গেজেট প্রকাশে দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছিলেন।
গত বছরের ০৮ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর হাজির করতে নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
এর মধ্যে ১২ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত দেন রাষ্ট্রপতি।
পরে অবশ্য দুই সচিব আদালতে হাজির হওয়ার পর গেজেট প্রকাশে সময় দেন আদালত।
১৯৯৯ সালের ০২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিলো।
আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ০৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।
গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিলো ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী।
এর পরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান।
পরবর্তীতে গেজেট প্রকাশে আরও কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নেন রাষ্ট্রপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
ইএস/এএসআর