অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মতে, বিচারপতি অপসারণের প্রক্রিয়ায় এখন শূন্যতা দেখা দিয়েছে। তবে আইনজীবীরা বলছেন, শূন্যতা নয়, আগের পদ্ধতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে অপসারণ করা যাবে।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়।
সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ০৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ০৯ নভেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এ রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ০৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।
এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেন। আপিল শুনানি শুরুর আগে গত ০৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ ১২ জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন।
গত ০৮ মে থেকে ০১ জুন পর্যন্ত ১১ কার্যদিবসে উভয়পক্ষ আপিল শুনানি ও যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন এবং ১২ জনের মধ্যে ১০ জন অ্যামিকাস কিউরি ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু মতামত উপস্থাপন করেন।
১০ অ্যামিকাস কিউরি বাকি চার কার্যদিবসে তাদের মতামত উপস্থাপন করেন। তাদের মধ্যে নয়জন বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের (বিচারকদের হাতে) কাছে রাখা বা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেন।
গত ০১ জুন শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন আপিল বিভাগ।
সোমবার (০৩ জুলাই) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে বিচারকদের অপসারণে সংসদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার পর বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে গেলো কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘পুনর্বহাল হয়নি। সংবিধানের যে অনুচ্ছেদ সংসদ বাতিল করেছে, সেটি আপনা আপনি রেস্টর (পুনঃস্থাপন) হবে না। এ অবস্থায় আমার মতে, শূন্যতা বিরাজ করছে। সংসদের কাজ তো আর আদালত করতে পারেন না’।
সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও এ মামলার অ্যামিকাস কিউরি ব্যারিস্টার এম আমীর-উল- ইসলাম বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় আগের অবস্থা অর্থাৎ সুপ্রিম জুডিশিয়াল ব্যবস্থা বলবত রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
একই মত দিয়েছেন এ মামলায় রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদও। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদের হাতে নেওয়া হয়েছিল। এ রায়ের মাধ্যমে তা খারিজ ও অকার্যকর হয়ে গেল। এখন থেকে বিচারকদের অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এখন অটোমেটিকভাবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফিরে যাবে। কারণ, পুরো সংশোধনী অবৈধ হয়ে গেছে।
১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ছিলো সংসদের হাতে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর আমলে চতুর্থ সংশোধনীতে তা রাষ্ট্রপতির কাছে নেওয়া হয়। কিন্তু জিয়াউর রহমানের আমলে পঞ্চম সংশোধনীতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের (বিচার বিভাগের কাছে) হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়।
মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে এসে ২০১৪ সালে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে আবার মূল সংবিধানে বিচারক অপসারণে পদ্ধতি ফিরিয়ে আনা হয়। যেটি সোমবার অবৈধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৭
ইএস/এএসআর
** আপিলেও ষোড়শ সংশোধনী বাতিল
** ‘রায়ে হতাশ হয়েছি’
** পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে: আইনমন্ত্রী